শনিবার, ০৫ আগস্ট, ২০১৭, ০১:৩৩:১১

দু’দলের কূটনৈতিক রাজনীতি: জোর তৎপরতায় আ.লীগ

দু’দলের কূটনৈতিক রাজনীতি: জোর তৎপরতায় আ.লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি : নির্বাচন নিয়ে বিদেশি চাপ নেই। সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে উন্নত দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপড়েনের ব্যাপারটি আগের জায়গায় নেই। এখন সম্পর্ক উন্নয়নের পথে।

সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও। পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ‘কৌশলে’ প্রভাব খাটাতে সক্ষম এমন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও এশিয়ার প্রধান পরাশক্তি চীনের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের প্রভাবে বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হচ্ছে।

বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সফর করছেন বাংলাদেশ। কূটনৈতিক ভূমিকার বলিষ্ঠতায় সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ধকল কাটিয়ে উঠছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় করে তোলার জোর তৎপরতা থাকবে বলে সরকারদলীয় সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিএনপি ওই নির্বাচন ভণ্ডুলের অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরের বছর তারা সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৯৩ দিন সারা দেশে অবরোধ ডাকে। সরকারের কৌশলের কাছে মার খেয়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটে বিএনপি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে লবিস্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উত্খাত করতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায় বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতায় সুবিধা করতে পারছে না সরকারবিরোধী চক্র। যে কারণে তাদের সরকার পতনের একের পর এক উদ্যোগ মাঠে মারা যাচ্ছে।

জানা গেছে, নির্বাচন, বিদেশি নাগরিক ও ব্লগার খুন, পুলিশ হত্যাসহ নানা ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। বর্তমানে সেই অবস্থান আর নেই। এই সরকারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক কখনই ভালো ছিল না। কিন্তু সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে ২০ মে সৌদি আরব সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণকালের উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাপানের সঙ্গেও আগের চেয়ে এখন সম্পর্ক ভালো। গত জুনে তিনি সুইডেন, মে মাসে অস্ট্রিয়া, এপ্রিলে ভারত সফর করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিভিন্ন দেশে সফর করছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তারা সরকার ও দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করছেন।

আগামী মাসে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই দেশ সফর করার কথা। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও ভৌগোলিক কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের মনোভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিএনপি ও জামায়াতের লবিস্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু জঙ্গি দমন-সরকারের উন্নয়নের ফলে তারা সুবিধা করতে পারছে না। ফলে বিদেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমা বলয়, এশীয় বলয়, মুসলিম বলয়সহ সব আন্তর্জাতিক বলয়েরই সম্পর্ক এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক ঘনিষ্ঠ।

কারণ বিশ্ববাসী এখন খুব ভালো করেই জানে, বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা ঠেকাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। তারা অতীতে দেখেছে, যে সরকারই ক্ষমতায় ছিল তারা জঙ্গিদের লালন-পালন করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ জঙ্গি ইস্যুতে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ সফর করছেন আবার বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান আমাদের দেশে আসছেন; তারা কেউ আর নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন না। তারা সরকারের উন্নয়ন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের প্রশংসা করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সম্পর্ক আগের যে কোনো সরকারের থেকে ভালো ও মজবুত। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক খুব আস্থার জায়গায়। আমরা এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। এখন সৌদি আরবের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। বিদেশি গণমাধ্যমও সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করছে। এগুলো কূটনৈতিক সাফল্য। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে গিয়েছিল। তারাও এখন ইতিবাচক।’ বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে