নিউজ ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার আট শতাধিক মানুষ বন্যার কবলে পরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। বিজিবি প্রথম পর্যায়ে তাদের বাধা দিলেও মানবিক দিক বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য বিজিবিকে অনুরোধ জানায়।
দরিবস ও জারিধরলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার দুটি গ্রাম। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও আদিতমারীর দুর্গাপুর ইউনিয়ন ঘেঁষা এ দুটি গ্রাম ধরলা নদী দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। বন্যার কারণে দুই গ্রামের আট শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু মোগলহাট ও দুর্গাপুরের চার গ্রামে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে গৃহপালিত পশুসহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও এনেছেন।
কোচবিহারের জারিধরলা গ্রামের অবস্থাপন্ন গৃহস্থ বছর উদ্দিন (৭০) আটটি গরু নিয়ে এসেছেন। ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন মোগলহাটের কর্ণপুর চওড়াটারী গ্রামের ভুট্টা ব্যবসায়ী রিয়াজুল হকের (৪৪) চাতালে। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু গরুগুলোকেই এখানে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমার স্ত্রী আম্বিয়া বেগমসহ (৬৫) পরিবারের অন্যরা মোগলহাটের চওড়াটারী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।’
জারিধরলা গ্রামের কৃষক সামিদুল হক (৩২) তাঁর স্ত্রী নাছিমা বেগমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চওড়াটারী গ্রামের গোলেনুর বেগমের বাড়িতে একই দিন সন্ধ্যায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমরা বাঁচলে হবে না, তাই আমাদের পাঁচটি ছাগলকেও বাঁচাতে এখানে নিয়ে এসেছি।’
দুর্গাপুরের কামারপাড়া এলাকায় সোমবার দুপুরে কথা হয় জারিধরলা গ্রামে ইকুল হকের স্ত্রী আরজিনা বেগম আর একই গ্রামের জাহিদুল হকের স্ত্রী মেহেরবানী বিবির সঙ্গে। তাঁরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন হাঁস-মুরগি ও একটি টিয়া পাখি। আরজিনা বেগম বললেন, ‘আমাদের যেমন জান আছে, ওদেরও জীবন আছে, তাই এ বিপদের সময় তাদেরকে নিয়েই এখানে (বাংলাদেশে) এসেছি।’
এরা উঠেছেন দুর্গাপুরের চওড়াটারী গ্রামের সামছুল হকের বাড়িতে। বছর উদ্দিন (৭০) ও স্ত্রী আম্বিয়া বেগম (৬৫) জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোগলহাট ও দুর্গাপুরের মানুষ তাঁদের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। বছর উদ্দিন বললেন, ‘তখন ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে আর আমরা এবার পানির ভয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। পানি কমলেই আমরা আবার চলে যাব।’ তিনি তাঁদের সবাইকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট মোগলহাট ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় দুই গ্রামের মানুষ যখন আসার চেষ্টা করছিল, তখন বিজিবির সদস্যরা তাঁদের কূলে ভিড়তে দিচ্ছিল না। এ অবস্থায় আমি মানবিক কারণে তাঁদের এখানে নামার সুযোগ দিতে বিজিবিকে অনুরোধ করি। তাঁরা কিছু শর্তে রাজি হয়।’
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ সোমবার রাত সাড়ে আটটায় বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে এ ধরনের গণপ্রবেশ করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বন্যার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধরলা নদী দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এসব বানভাসি নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাটি মানবিক। যারা এসেছেন তাঁরা সবাই যেন নিরাপদে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে বিষয়টি দেখার জন্য বিজিবি সংশ্লিষ্ট সবার নজরদারি করা জরুরি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ ধরনের বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিবেশী সুলভ যে সম্পর্ক সেটিকে দৃঢ় করবে বলে মনে করি।’
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোর্শেদ বলেন, মানবিক কারণে এবং বন্যার এ বিপর্যয়ের সময় তাঁদের এখানে আশ্রয় নিতে দিতে পেরে ভালো লাগছে। তাঁরা যাতে বন্যার পানি কমলেই ফিরে যান, সে জন্য বিজিবির সদস্যদের খোঁজখবর রাখতে বলেছি।’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস