সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ০১:১৮:৫৬

নতুন আইন চায় নির্বাচন কমিশন

নতুন আইন চায় নির্বাচন কমিশন

সিরাজুস সালেকিন : সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য নতুন আইন চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৯৭৬ সালের সীমানা পুনঃনির্ধারণের অধ্যাদেশ রহিত করে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন ২০১৭’ নামে আইন প্রণয়নের জন্য খসড়া চূড়ান্ত করেছে কমিশন।

গতকাল কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত কমিটি একটি খসড়া উত্থাপন করে। খসড়ার ওপর নির্বাচন কমিশনারদের ও একজন আইন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ মতামত গ্রহণ পর চূড়ান্ত খসড়াটি জাতীয় সংসদের পাসের জন্য অথবা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হওয়ার আগেই আইনটি ভেটিংয়ে যাবে।

তবে এই নাম বদলালেও আইনের ভেতরে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু আইনটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এই আইন নতুন কিছু না। বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। সংসদীয় আসনগুলো ভোটার সংখ্যা, আয়তন, জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক সীমানার ওপর ভিত্তি করে এবং গ্রামীণ জনগণের সুবিধার জন্য গ্রামের আসন বাড়িয়ে শহরের আসন কমানোর চিন্তাভাবনা কমিশন করছে।

বড় দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগেই খসড়া ভেটিংয়ে যাচ্ছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো কমিশন আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সংলাপের পরেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। একজন কমিশনার খসড়াটি উপস্থাপন করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, যেভাবে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন প্রণয়নের প্রস্তাব প্রস্তুত হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিদ্যমান সীমানাতেই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকার আয়তন, অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে।

কমিশনের প্রস্তাবিত সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনের খসড়ার ৭ ধারা (গ) তে বলা হয়েছে, ‘সর্বশেষ আদমশুমারীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা পুনঃর্নিধারিত হইবার পর হইতে পরবর্তী আদশশুমারির প্রতিবেদন প্রাপ্তির মধ্যবর্তী সময়ে বা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হইলে উহা সর্বশেষ সীমানার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হইবে। এক্ষেত্রে কমিশন নির্বাচনী এলাকার আয়তন, অবস্থান হুবহু ঠিক রাখিয়া নির্বাচনী এলাকার শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত করিয়া বিজ্ঞপ্তি আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে।’

এছাড়া প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ হইতে অনূর্ধ্ব ১২ মাসের মধ্যে সীমানা পুনঃর্নিধারণ কাজ সম্পন্ন করতে হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, আদশশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্র্বেই যদি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন তফসিল ঘোষণা করা হইয়া থাকে এবং ওই সময়সূচি যদি সীমানা নির্ধারণে সময়সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তবে ঘোষিত নির্বাচন সম্পন্ন হইবার পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করিতে হইবে।’

দেশের সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২০১১ সালে। দশ বছর পরপর আদমশুমারি হয়। আদমশুমারির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ২০১৩ সালে বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা পুনঃর্নিধারণ করে। পরবর্তী আদমশুমারি এখনও শুরু হয়নি।

এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০১৮ সালের ২৯শে অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারি মধ্যে। এর মধ্যে কমিশনের প্রস্তাবিত আইন সংসদে পাস হলে এ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনঃর্নিধারণের কোনো প্রয়োজন হবে না।

তবে প্রস্তাবিত আইনটির ১৪ ধারায় কার্যকারিতার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন প্রণীত জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রযোজ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, সীমানা নির্ধারণের পূর্বে জাতীয় সংসদ সদস্যগণ যে নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সেই নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হিসাবে সংসদের নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত বহাল থাকবেন।’

ফলে প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে পাস হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণের তেমন প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবিত আইনে এর অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাও নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকবে। জেলা পর্যায়ে আসন বণ্টন সংক্রান্ত বিধান বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি আসন থাকবে। সিটি করপোরেশনগুলোতে কতটা আসন থাকবে তাও বিধি দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।

তবে এই আইনের অধীন কোনো নির্বাচনী এলাকার আসন বণ্টন কিংবা সীমানা নির্ধারণ বা কমিশন কর্তৃক বা কমিশনের কর্তৃত্বাধীন গৃহীত কোনো কর্মপন্থা বা কৃত কোনো কাজকর্মের বৈধতা সন্ধন্ধে কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট কোন প্রশ্ন উত্থাপিত করা যাবে না। রোডম্যাপের প্রস্তাবনায় কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, সময়ের পরিবর্তনে এবং জনগণের শহরমুখী প্রবণতার কারণে বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার আধিক্য বা ঘনত্ব বিবেচনা করা হলে শহর এলাকায় সংসদীয় আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে পল্লী অঞ্চলে আসন সংখ্যা কমে যাবে। ফলে শহর ও পল্লী অঞ্চলের আসনের বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ হবে। সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি না করে ভোটার সংখ্যা এবং সংসদীয় এলাকার পরিমাণ বিবেচনায় নেয়ার জন্য আইনী কাঠামোতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। কেননা ভোটার তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ করা হয়। জনসংখ্যা, মোট আয়তন ও ভোটার সংখ্যা এসবগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা সীমিত করে দিয়ে আয়তন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি কমিশন সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে।

এদিকে কমিশন সভায় সীমানা নির্ধারণ আইন ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়। স্মার্টকার্ড বিতরণে বায়োমেট্রিক আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণের জন্য সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় এক সেট করে যন্ত্র কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। চলমান বন্যায় স্থগিত হওয়ায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ১৬টি নির্বাচন ২৪শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

চট্টগ্রাম জেলার নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, চারটি ইউপি’র সাধারণ নির্বাচন, সাতটি ইউপি’র উপনির্বাচন, একটি ইউপি’র চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচন ও জেলা পরিষদের তিনটি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল ২০শে আগস্ট। ভোটের চারদিন আগে এ ১৬টি এলাকার ভোট স্থগিত করা হয়। এছাড়া বন্যার্তদের সহায়তার জন্য কমিশন ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের একদিনের বেতন প্রধানমনন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সংলাপের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট জাতীয় পরিষদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কমিশন ইতিবাচকভাবে চিন্তাভাবনা করছে। এধরণের পরিষদ গঠনের আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুশীল সমাজের সুপারিশের বিষয়েও কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে