ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডের ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে সাতজনের দগ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। ওই ভবনের পঞ্চম তলায় আস্তানা গেড়ে বসা ‘জঙ্গি’ আবদুল্লাহ তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থান নিয়েছিলেন।
বুধবার বিকাল ৩টা ১৮ মিনিটে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।
এর আগে সোমবার মধ্যরাত থেকে মাজার রোডের পাশের বর্ধনবাড়ি ভাঙা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয় তলা ভবনটি ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিন্তু কে এই ‘জঙ্গি’ আবদুল্লাহ? অভিযানের পর এমন প্রশ্ন সবার মনেই।
এ ব্যাপারে র্যাবের মহাপরিচালক জানান, জঙ্গি আবদুল্লাহর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। তার বাবার নাম ইউসুফ আলী, জঙ্গি আবদুল্লাহরা সাত ভাই। ঢাকাতে জঙ্গি আবদুল্লাহর দুই বউ- নাসরিন ও ফাতেমা, দুই সন্তান এবং দুই সহযোগী নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে দুই সহযোগীর পরিচয় জানা যায়নি।
র্যাবের মহাপরিচালক আরও জানান, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ২০০৫ সালে জঙ্গিবাদে (জেএমবি) সম্পৃক্ত হয়। ২০০৮-০৯ সালে জেএমবি ভেঙে তামিম-সারোয়ারের নেতৃত্বে নব্য জেএমবি গঠিত হয়। ওই সময় ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। তার বাসায় নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ে প্রায় সব নেতাই সময় কাটিয়েছেন।
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গিবাদে জড়িত। মিরপুর মাজার রোডের দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা ইলেকট্রনিকসামগ্রী মেরামতের কাজ করেন। এলাকাবাসীও বলছেন, তিনি আইপিএস ও ফ্রিজ মেরামতসহ বাসাবাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করতেন। পাশাপাশি ওই বাড়ির ছাদে কবুতর পালতেন। তবে তার গ্রামের বাড়ির খোঁজ দিতে পারেননি কেউ।
এদিকে র্যাব যাকে আবদুল্লাহ বলছে, তাকে এলাকাবাসীর অনেকে টিটু নামে চেনেন। তারা বলছেন, ওই ভবনে খোকা নামে তার এক ছোট ভাইও থাকত। আবদুল্লাহকে কখনোই জঙ্গি বলে সন্দেহ হয়নি তাদের। এলাকার দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এড়িয়ে চললেও প্রায়ই চায়ের দোকানে বসতেন। কিন্তু তিনি যে ভেতরে ভেতরে জঙ্গিবাদে জড়িত তা একটুও বোঝা যায়নি।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এড়িয়ে চলতেন। রাস্তাঘাটে তেমন কথা বলতেন না। তবে প্রায়ই চায়ের দোকানে বসতেন। এলাকায় দান-খয়রাতও করতেন তিনি।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার মসিন্দা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা থেকে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় দুই জঙ্গিকে আটক করে র্যাব। আটককৃত দুই সহোদর হল মাসুদ ও খোকন। তবে ওই দুই সহোদর ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাত থেকে মিরপুরের দারুস সালামের ওই বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। বাড়ির ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি থেকে ৬৫ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে জঙ্গি আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি। রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস