শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:০৯:২৭

মিয়ানমারকে 'সাইজ' করার 'সহজ' উপায়

মিয়ানমারকে 'সাইজ' করার 'সহজ' উপায়

নিউজ ডেস্ক : রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে দমন-পীড়ন চলছে তার অবসানে বিভিন্ন মহল থেকে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলেছেন। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাস রোহিঙ্গাদের অন্তত স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার অধিকার বা কাজের সুযোগ, শিা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার দাবি তুলেছেন। সীমান্তের অপর পাশে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে বুধবার সফরে এসেছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুস ওগলু। একই ইস্যুতে আগের দিন ঢাকা ঘুরে গেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি।


কিন্তু এই যে চাপের কথা বলা হচ্ছে, তাতে কতটা কাজ হওয়ার সম্ভাবনা?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেছেন, মিয়ানমার দীর্ঘ দিন ধরে একলা চলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক চাপকে তারা খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। ‘নিজস্ব প্রচুর সম্পদ তারা পেয়েছে। চীন তাদের পে জাতিসঙ্ঘে ভেটো দেয়। তাদের যে সামরিক কর্তৃত্ব, সত্তর বছর ধরেই তারা বল প্রয়োগ করে দেশটাকে এক করে রেখেছে।’
তবে সামরিক পদেেপর হুমকি দিয়ে মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে বলে মনে করেন প্রফেসর শাহীদুজ্জামান।


এ েেত্র বাংলাদেশের সাথে ইন্দোনেশিয়া আর তুরস্ক মিলে একটি সামরিক জোট করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই কোয়ালিশনের (জোট) মাধ্যমে সরাসরি যদি মিয়ানমারকে হুঁশিয়ারি দেয়া যায় যে, পরিণতি অত্যন্ত শোচনীয় হবে এবং যদি তারা উইথড্র না করে নেয় তাহলে সামরিক পদপে অসম্ভব কিছু না, এই ধরনের চাপ সৃষ্টি করা, সেটা মিয়ানমারের সামরিক নেতারা এই ভাষাকেই বুঝবে। এই ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাকে তারা মোটেই গুরুত্ব দেবে না।’

মিয়ানমারের সাথে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশের বাধা কোথায়?

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বহু বছর ধরে কূটনীতিকভাবে বাংলাদেশ চেষ্টা করলেও পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে বরং আরো অবনতি হয়েছে।

কূটনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান কোনো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাতে শুরু করেছে মুসলিম প্রধান দুই দেশ তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া।

কিন্তু এই সংকটের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে বাংলাদেশ কি যথেষ্ট করছে?

অনেকে মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশ যেসব ভূমিকা নিয়েছে সেটা যথেষ্ট নয়।

কিন্তু এ ধারনার সাথে পুরোপুরি একমত নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আমেনা মহসীন।

তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করেছে।

অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, ‘এক্ষেত্রে খুব অফেনসিভ স্ট্র্যাটেজি নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব কিনা সেটা চিন্তার ব্যাপার আছে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কেন জোরালো এবং আক্রমণাত্নক অবস্থান নিতে পারছে না?

আমেনা মহসিন মনে করেন, বাংলাদেশ চায় না মিয়ানমারের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন এবং আমেরিকার মতো দেশগুলো নীরবতা পালন করছে। সেজন্য বাংলাদেশ জানে যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় শক্তিগুলোর সমর্থন পাবে না।

মিয়ানমারে যেহেতু নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, সেজন্য সেখানকার শাসক গোষ্ঠির কোন জবাবদিহিতা নেই। তারা এধরনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

‘কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের সামনে একটা নির্বাচন আছে। সেটাও বাংলাদেশকে ক্যালকুলেশনে রাখতে হবে। কারণ এটা নিয়ে অনেক ধরনের রাজনীতিও হতে পারে,’ বলছিলেন অধ্যাপক আমেনা মহসিন।

তাছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোননা সামরিক উপায়ে হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। এ সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ তৈরির ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া বান্দরবান এবং কক্সবাজার ভৌগোলিকভাবে একটি স্পর্শকাতর এলাকা।

সেজন্য রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কূটনীতিকভাবে করার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির বিরুদ্ধে যাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়। সেজন্য চীন এবং রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার।

চীন বাংলাদেশেরও বন্ধুপ্রতিম দেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের নীতিকে বাংলাদেশ কতটা প্রভাবিত করতে পারবে?

অধ্যাপক আমেনা মহসিন মনে করেন, চীন এমন একটি রাষ্ট্র যারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। মিয়ানমারের সাথে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতির জন্য মিয়ানমারকে প্রয়োজন।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবার বিষয়টিকে সমর্থন করবে না চীন, বলছিলেন আমেনা মহসিন।

আমেনা মহসিন বলেন, ‘বাংলাদেশ এটা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অবশ্যই আনতে পারে। এবং আনা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে