নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। এর ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এদিকে সহযোগিতার নামে রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের বিয়ে করার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে একটি দল। এ দলের কোনো কোনো সদস্য আবার বিবাহিত সামর্থ্যবান পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন’ নামের গ্রুপে গাজী মো. তানজীল নামে একটি আইডি থেকে এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়। বলা হয়, ওই রাতেই সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁদের একটি দল টেকনাফ যাচ্ছে।
ওই আইডি থেকে টেকনাফে গিয়ে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তার বিস্তারিত জানতে ইনবক্সে যোগাযোগের কথা বলা হয়। পরে মো. নিজামুল হক নামের অন্য একটি আইডি থেকে বিবাহিত লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ কেউ আবার বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন, মানবিকতা দেখানোর জন্য বিয়ে করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন, যেসব নারী তাঁদের স্বামীর বহুবিবাহ মেনে নিতে পারবেন না, তাঁরা দিনের (ধর্মের) পথে নেই।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই এ দেশে বিয়ে করে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, রোহিঙ্গারা এখানে বিয়ে করে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আত্মীয়তার সূত্র ধরে ভোটার তালিকাতেও নাম লেখাচ্ছে তারা।
স্থানীয়দের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি বিয়ে বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
আদেশ অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি কোনো কাজী রোহিঙ্গাদের বিবাহ নিবন্ধন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিয়ে নিবন্ধন হলেও সেটি অবৈধ হবে। কাজী ছাড়াও যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিয়ে নিষিদ্ধের এই আদেশকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের দাবি, কোনো আইনেই কোনো জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ ও গোত্র বা কোনো দেশের নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ করা যায় না।
এছাড়া আগে থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই এ দেশে বিয়ে করে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে জানতে গাজী মো. তানজীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন। বাংলাদেশের আইনে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ সে সম্পর্কে জানেন কি না, এই প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন, তাঁরা নজরদারি করছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড, গোয়েন্দারা তৎপর আছেন। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত সাত দিনে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।এ সময় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের ১০ হাজার গ্রাম। রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মূলে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস