নিউজ ডেস্ক : রাখাইনের সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পেতে স্রোতের মতো ধেয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দায়িত্ব বাংলাদেশের একার ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না, মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারের অনলাইন ভার্সন থেকে এ খবর জানা গেছে।
সম্প্রতি ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ছেন সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে। আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটছে বাংলাদেশ সীমান্তে। গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এতো অল্প সময়ে এই বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করায় বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
নাজিব রাজাক বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পরিকল্পিতভাবে এ মানুষগুলোর ওপর বৈষম্য, নির্যাতন, খুন, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাদের প্রতি কোনও দয়ামায়া বা অনুকম্পার স্থান নেই। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বাধীন ওই ত্রাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেভাবে স্রোতের মতো করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে, এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর দায় বাংলাদেশের ওপর চাপানো যায় না।’ ত্রাণ হিসেবে বিস্কুট, চাল এবং সাবানভর্তি দুটি প্লেন পাঠানোর কথা জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য মালয়েশিয়ার সরকার ১২ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে যা চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে জানান, মালয়েশিয়া সরকারের উদ্যোগে এবারই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ওই ত্রাণ চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় বহির্নোঙ্গরে আছে। তবে ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে কী কী আছে তা এখনও জানা যায়নি। এদিকে স্টার অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ঠিক কেআান ধরেএনর মানবিক সহায়তা বেশি প্রয়োজন তা খুঁজে দেখতে একটি প্রতিনিধি দল আগামী সোমবার ঢাকায় পাঠাচ্ছে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বিপন্ন রোহিঙ্গারা
রাখাইনের সহিংসতা থেকে বাঁচতে স্রোতের মতো ধেয়ে আসা বিপন্ন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষরা অমানবিক দিন যাপন করছেন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে। প্রয়োজনীয় খাবার আর পানির অভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। কোনওরকমে নিজেদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার পথ পাচ্ছে না। এমন বিপন্নতার মধ্যেই বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকার সহায়তা ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
তবে এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা অক্ষম। মালয়েশিয়ার সংবাদ সংস্থা বারনামার এক খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরো কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ওই টিম আলোচনা করবে ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস