নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার নামের বৌদ্ধ রাষ্ট্রটি অত্যন্ত কৌশলে বারবার সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সংখ্যালঘু মুসলমানদের দ্রুত পালাতে বাধ্য করছে। কিন্তু এ বিষয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের সাথে `গোপনে‘ একটি `প্রত্যাবর্তন চুক্তি‘ স্বাক্ষরিত হয়।
প্রিস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ওই নথি প্রমাণ করে যে, মিয়ানমার নীতিগতভাবেই ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মিয়ানমার চলমান সহিংসতার জন্য রোহিঙ্গাদেরই দায়ী করে তারা দাবি করছে যে, ওই দেশে রোহিঙ্গাদের থাকার কোনো অধিকার নেই এবং তাদের উচিত বাংলাদেশে চলে যাওয়া, যেখান থেকে তারা এসেছিলো। এমনকি মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে `রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করতেও নিষেধ করছে। আর তারা সেটা করছে ঐতিহ্যগতভাবে অষ্টম শতাব্দি থেকে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের স্মৃতি যেনো মুছে যায়। কিন্তু ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের সাথে করা মিয়ানমারের গোপন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চুক্তি প্রমাণ করে যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের একজন সাবেক কূটনৈতিক এ গোপন নথির সত্যতার বিষয়ে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
১৯৬২ সালের পর থেকে মিয়ানমার (তখন বার্মা হিসিবে পরিচিত ছিলো) রোহিঙ্গাদের নতুন করে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দমন করা শুরু করে। ১৯৭৭ সালে বার্মা দেশের নাগরিকদের ও বিদেশিদের চিহ্নিতের জন্য নিবন্ধন শুরু করে এবং প্রাথমিকভাবে এর মূল উদ্দেশ্যই ছিলো রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ ছিলো, তাদেরকে জোর করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যপক ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সীমান্তে জাতিসংঘের ১৩টি শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়। বার্মিজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি দাবি করছে যে, পালিয়ে গিয়ে শরণার্থীরা প্রমাণ করছে যে, রোহিঙ্গারা বার্মায় বসবাসের উপযোগী নয়। কিন্তু বাংলাদেশ বার্মাকে তাদের দেশের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে এবং জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কিছু সুবিধা দিয়ে বার্মাকে রাজি হতে উৎসাহিত করছে।
১৯৭৮ সালের গোপন চুক্তির জন্য ওই বছরই দুই দেশের কর্তৃপক্ষ ৭ থেকে ৯ জুলাই ঢাকায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। এবং তারা এ চুক্তি অনসরণ ও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার ব্যাপারে একমত হয়। সরকার দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে বৈধ নাগরিকত্ব দিতেও একমত হয়। যারা এখন বাংলাদেশের ক্যাম্পে বসবাস করছে তারা জানান, তাদের পরিবারের সদস্যদের একসময় বার্মিজ জাতীয় পরিচয়পত্র ও দলিলপত্র ছিলো।
১৯৭৮ সালের ওই নথি অনুযায়ী এটা প্রামাণ হয় যে, বার্মা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিলো। এসব পরিবারের অধিকাংশরই বার্মার বৈধ নাগরিক হিসেবে একসময় জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা কোনো না কোনো দলিল ছিলো।
১৯৯১ ও ৯২ সালের সময়টুকুতে নির্যাতন, শ্রমশোষণ ও ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে আরো আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ১৯৯২ সালে তাদের বৈধ নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মধ্যে আবারও ঠিক একইরকম চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৯২ সালের ২৩ থেকে ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে করে। ওই চুক্তিতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের `মিয়ানমারের বাসিন্দা’ বা `মিয়ানমারের সমাজের সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ কারণে রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক নয়- তা মিয়ানমারের দাবি মেনে নেওয়া যায় না। যতদ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের লঙ্ঘন করা চুক্তি ও রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে এর জন্য বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে দেশটির উপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। দেশটির সরকারেরকে অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকির পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপও প্রয়োগ করতে হবে। সেই সাথে নোবেল পাওয়া ডি-ফ্যাক্টো নেতা অং সান সুচির ওপরও চাপ দিতে হবে।-আমাদের সময়
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস