নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট সর্বশেষ সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক চার লাখ রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই শিশু।
আব্দুল আজিজ নামে ১০ বছরের একটি রোহিঙ্গা শিশুকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানালো, মিয়ানমার থেকে পাহাড়, নদী ও জঙ্গল পেরিয়ে একা একাই সে বাংলাদেশে পোঁছেছে। তার পরিবারের বাকি সদস্যরা কোথায় তা সে জানেনা। কোথায় সে যাবে তা-ও সে জানেনা।
পথিমধ্যে একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী দলের এক নারী তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো- ‘তোমার বাবা-মা কোথায়?’ আজিজ জানালো, সে জানেনা তার বাবা-মা কোথায়, আদৌ বেঁচে আছে না-কি মরে গেছে। পরবর্তীতে ওই দলের নারী সদস্যরাই তাকে তাদের দলে টেনে নেয় এবং বাংলাদেশের দিকে পা বাড়ায়।
এ তো গেলো শুধু আব্দুল আজিজের কথা। তার মতো আরও অন্তত ১১০০ শিশু মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ এসে পৌঁছেছে। যাদের বাবা-মা নিহত কিংবা হারিয়ে গেছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্য থেকে এই পরিসংখ্যানটি দিয়েছে ইউনিসেফ।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাবা-মা আত্মীয় পরিজন ছাড়া একা একা অবস্থান করা ওই শিশুরা নিপীড়ন থেকে শুরু করে, মানব পাচার এবং মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। তাদের অনেকেই নিজের চোখের সামনে বাবা-মা’কে খুন হতে দেখেছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং কয়েকটি বৌদ্ধ উগ্র সংগঠন এসব হত্যাকান্ড চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের তরফ থেকে এই পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশে আসা শিশুদের অনেকেরই গুরুতর আঘাত রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, সর্বশেষ সহিংসতা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আসা ১ লাখ ২৮ হাজার শরণার্থীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই রয়েছে শিশু। আর এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজারেরই বয়স ছিলো ১ বছরের নিচে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশুরাই সবচেয়ে নাজুক অবস্থার শিকার। নোংরা পরিবেশে অনেক শিশু উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোন কোন শিশু বাইরেই রাত্রিযাপন করছে, নোংরা পানিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে, অসহায়ের মতো কোন কোন শিশু হা হয়ে মানুষ দেখছে, ভাবছে আনমনে। ইউনিসেফের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস