রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:০২:৩৭

বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে একটি অনুরোধ করলেন মিয়ানমার সরকার

বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে একটি অনুরোধ করলেন মিয়ানমার সরকার

নিউজ ডেস্ক : জীবনের তাগিদে দেশ ছাড়ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। সব হারিয়ে শুধুই বেঁচে থাকার আশা নিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পাড়ি জমাচ্ছে এপারে।

বাংলাদেশের সাথে রাখাইন সমস্যা নিয়ে বিরাট আর্ন্তজাতিক চাপে পড়েছে মিয়ানমার।আর তাই বাংলাদেশকে সমস্যা সমাধানে প্রস্তাব দিল মিয়ানমার। তবে এই ক্ষেত্রে তাদের শর্ত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপ নয়, বরং দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশের সাথে রাখাইন সমস্যা সমাধান করতে চায় মিয়ানমার।

তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমারকে দোষারোপ করা থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বিরত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেও টিন সম্প্রতি নেপিডোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে এ কথা জানান।

এ ব্যাপারে মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) চরমপন্থী বাঙ্গালী সন্ত্রাসবাদীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইনে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে মিয়ানমার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে।

এতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক চাপের পরিবর্তে ধারাবাহিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আবারো শুরু করার ওপর জোর দিয়েছে। এতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, তথ্য বিনিময়, সীমান্তে কমিউনিকেশন অফিস খোলা ও দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়।

কেও টিন বলেন, বাংলাদেশের কিছু সংবাদপত্র রাখাইন রাজ্যে বাঙ্গালীদের (রোহিঙ্গা) বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনছে। গণমাধ্যমের এ ধরনের লাগামহীন লেখার রাশ টেনে ধরতে হবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষে। কেননা এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

আর আগে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরাদর্শদাতা অং সান সু চির দপ্তরের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

নিরাপত্তা পরিষদের গত বুধবারের বৈঠকটি বাংলাদেশর পক্ষে বিশ্ব সম্প্রদায়ের শক্ত অবস্থান বলে মনে করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ম্যাডাম সু চি তো যাচ্ছেন না বলে আমরা দেখেছি। তার দপ্তরের একজন মন্ত্রী, যিনি পররাষ্ট্র বিষয় দেখাশুনা করেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। আমি অপেক্ষা করছি। যাইহোক তারপর দেখা যাক কী বলে।’

তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান যে যথার্থ তারই প্রতিফলন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদার বৈঠকে পাওয়া গেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছিলামই যে, নিরাপত্তা বৈঠকে বসুক এবং এ ব্যাপারে আলোচনা করে তারা একটা বক্তব্য দিক। কাজেই তারা তো দিয়েছে এবং অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং খুবই জোরালো বক্তব্য।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের সাথে রাখাইন সংকট সমাধানের সব ধরনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি পন্থা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালী’ হিসেবে উল্লেখ করার মিয়ানমারের প্রবণতার বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানামারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার তলব করে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকাভাবে উস্কানিমূলক এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু মিয়ানমারকে কোনোভাবেই বিরত করা যায়নি।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে