আসাদুজ্জামান, উখিয়া থেকে : কুড়ি দিন আগে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। প্রথম পনেরো দিন কেটেছে রাস্তায়। তিন দিন আগে কক্সবাজারের বালুখালী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই মেলে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকালের বৃষ্টিতে ঘরের সামনে এখন কোমরপানি। এ অবস্থায় ছোট্ট সন্তান নিয়ে এখন কোথায় যাবেন—এই জিজ্ঞাসা শাহজাহান বেগমের।
মিয়ানমারের রাশিদংয়ের রাজারবিল গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান বেগম। তার ঘরে আগুন দেওয়ার পর স্বামী ইয়াকুব আলী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এখন আট বছরের মেয়ে তসলিমা আক্তার ছাড়া আপন বলতে কেউ নেই।
দুপুরে দেখা গেল, শাহজাহান বেগমের মতো শত শত মানুষের থাকার জায়গায় পানি জমেছে। পেটে খাবার নেই। তাই দুপুরের পর থেকে এসব রোহিঙ্গার অনেকে নিজের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বালুখালীর কাস্টম এলাকার অস্থায়ী শিবির ছাড়তে শুরু করেন। লক্ষ্য শিবিরের সামনে কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক। কারণ, সড়কে উঠতে পারলেই হয়তো ত্রাণের দেখা মিলবে, এমন আশা তাদের।
ক্যাম্প থেকে রাস্তায় যেতে হলে একটি খাল পেরোতে হয়। কেউ কেউ ছোট্ট শিশুদের মাথায় নিয়ে পার হচ্ছেন, কেউ কেউ সাঁতরিয়ে পার হচ্ছেন। খাল পার হওয়ার জন্য ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদের। থাকার জায়গায় পানি দখল করার পর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকের পেটে দানা পড়েনি।
মংডুর হাসুরাতা গ্রামের বাসিন্দা মবিনা খাতুনের কোলে তিন মাসের সন্তান। মবিনা বললেন, ‘থাকার জায়গা নেই। সকাল থেকে কোনো কিছুই খাইনি। রাস্তায় না গেলে তো খাবার ঘরে আসে না।’
কুতুপালং থেকে পালংখালীর রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা। শিশুরা রাস্তায় গাড়ি দেখলেই তার পিছু ছুটছে। কুতুপালং, চ্যাংকালী ও বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা যায়, হাঁটুপানি জমে যাওয়ার পরও সেখানে অনেক শরণার্থী অবস্থান করছেন। বিশেষ করে অনেক নারীর কোলে দুধের শিশু। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম আলো
এমটিনিউজ/এসএস