বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৭:৩৬:৩১

আকিয়াব ও রাসিডংয়ে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা তিলে তিলে মারা যাচ্ছে!

  আকিয়াব ও রাসিডংয়ে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা তিলে তিলে মারা যাচ্ছে!

নিউজ ডেস্ক : এপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী আর মিয়ানমারে বাঙালি শরণার্থী। রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই হলো ভাগ্য। ওপারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের যেসব ক্যাম্প রয়েছে সেসব ক্যাম্পের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এমনকি যেসব ক্যাম্পে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছিল তাও মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্মি বাহিনী ও নাডালা বাহিনীর নির্যাতনে এপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এমনকি ওই সব ক্যাম্পে যারা আটকে আছেন তারা বর্তমানে নারকেল-সুপারি গাছের মাথার শাস এবং কলাগাছের থোড় খেয়ে বেঁচে আছেন বলে তাদের আত্মীয়স্বজন জানিয়েছেন। একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, তাদের আত্মীয়দের সাথে ফোনে কথা বলে তারা এই করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরেছেন। মোবাইল ফোনে তারা বলেছেন, ‘আঁরারে তোয়ারা বাচাইবারলাই কুচশিস গরো।

তোয়ারাতো এত্তুগিয়োগই, তোয়ারাতো বাচিগিউগোই। এহন আরারারে মগত্তু বাচাইবারলায় কুচশিস করো।’ এ দিকে রাসিডংয়ের জেলা শহরেও এভাবে কয়েক হাজার মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বজনেরা অবরুদ্ধ হয়ে আছেনÑ এ কথা শুনে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এপারের আত্মীয়রা। তারা বলেছেন, এখনো লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন এলাকায় আটকে আছেন। তারা জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন।

এ দিকে যেসব শরণার্থী নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ালেও দুঃখ-দুর্দশা যেন কমছে না। গতকাল বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণের কারণে অনেক ক্যাম্পের মানুষ দুই দিন নির্ঘুম রয়েছেন। রাস্তার পাশে যেসব অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল তাদেরকে দূরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ দিলেও অনেকেই এখনো অভুক্ত রয়েছেন। শরণার্থীদের পুঁজি করে এ এলাকায় কিছু অতি মুনাফাখোর ও প্রতারক চক্রের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অশিক্ষিত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নানা উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ত্রাণ দেয়ার নাম করেও অনেকে প্রতারণা শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের সাথে। অনেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ তাদেরকে ঘর তৈরি করার কথা বলে অর্থ দাবি করছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যেসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রসূতিদের স্বজনেরা রোগীকে কাঁধে করে হাসপাতাল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ওপারে বর্মি বাহিনী ও নাডালা বাহিনীর হাতে আহত হয়েছেন এমন শত শত মানুষ চিকিৎসার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

রোগীর চাপের কারণে অনেককে অর্ধেক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ মিলেছে। এ দিকে রাস্তাঘাটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রশাসন। অপরাধীদের শাস্তি দিতে গতকাল বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে টহল দিতে দেখা গেছে। রোহিঙ্গারা যাতে রাস্তায় উঠে মানুষকে বিরক্ত না করে সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই বলেছেন, ক্যাম্পে গেলে খাবার জোটে না; যে কারণে তারা রাস্তার পাশে এসে বসে থাকেন। তাতে কিছু হলেও খাবার জোটে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে