শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫৭:১০

গোমর ফাঁস, জাহাজভর্তি পচা চাল

গোমর ফাঁস, জাহাজভর্তি পচা চাল

নিউজ ডেস্ক : সরকার নেয়নি। তাই বেসরকারিভাবে হলেও চাল বিক্রি করে যাবেন বিদেশি দুটি জাহাজের সংশ্লিষ্টরা। আর এ নিয়ে দেন-দরবার করতে গিয়ে গত দু’দিন আগে ফাঁস হয়ে যায় চালের গোমর। তা হচ্ছে চালগুলো পচা। খাওয়ার অনুপযোগী। ব্যবসায়ীরা এ কথা বললেও খাদ্য বিভাগ বলছে অত্যন্ত নিম্নমানের। তাই খাদ্য বিভাগ চালগুলো ফিরিয়ে নিতেও বলেছে থাইল্যান্ডের এ জাহাজ দুটিকে। কিন্তু জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাল ফেরত না নিয়ে চালগুলো বেসরকারিভাবে হলেও বেচে যাবেন। তাই গত মঙ্গলবার থেকে তারা যোগাযোগ করেন চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর থেকে পচা চাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় চট্টগ্রামজুড়ে। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারিভাবে আমদানি করা চাল বেসরকারিভাবে বিক্রির চেষ্টা কেন? এখানেই খটকা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানলাম জাহাজ দুটির চাল পচা। ফলে এ নিয়ে যেন কোনো বুমেরাং না হয় তাই গত ২০ দিন ধরে সরকারের খাদ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনেকটা গোপনে করে গেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফেরত আদেশসহ সব প্রক্রিয়া। এমন মন্তব্য ব্যবসায়ীদের।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে খাদ্য বিভাগ চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা প্রায় ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এরমধ্যে এমভি থাই বিন বে নামের একটি জাহাজ ১২ হাজার ২৯০ টন চাল নিয়ে ৩১শে আগস্ট এবং এমভি ডায়মন্ড-এ নামের অপর চালবাহী জাহাজ আসে ১লা সেপ্টেম্বর। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল রয়েছে।

কিন্তু চালগুলো খালাসের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, দরপত্রের শর্তের চেয়ে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি। ফলে চালগুলো গ্রহণ করা হয়নি। ওগুলো ফেরত নিতে বলা হয়।

তিনি বলেন, জাহাজে থাকা চালের মধ্যে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য জাহাজের চালের দানায় এর পরিমাণ পাওয়া যায় ১৭ শতাংশ। সরকারের আমদানির দরপত্র চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার গ্রহণযোগ্য সীমা ৩ শতাংশ।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একটি জাহাজে যত চাল আনা হবে, তার মধ্যে নমুনায় যদি ৪ শতাংশ পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তবে জরিমানা আদায় করে তা গ্রহণ করতে পারবে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি জাহাজে আনা চাল জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

খাদ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে মোট ৫০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুটি চালানেই শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়ে আসা হয়েছে পচা চাল।

চালগুলো ফেরত নিতে বলা হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ দুটির চাল বেসরকারিভাবে বিক্রির জন্য দেন-দরবার করছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে ব্যবসায়ীরা চালগুলো কেনার আগে খাদ্য বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীদের কেউ এ চাল ক্রয়ে আগ্রহী নই বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী বাবুল অ্যান্ড সন্সের মালিক বাবুল সওদাগর বলেন, থাইল্যান্ড থেকে যে চাল আমদানি করা হয়েছে তা বেশ পুরনো ও রিজেক্টেড। সে দেশের মানুষ এসব চাল খাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের খাওয়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এমন সময় এসব চাল নিয়ে আসা হলো যখন চাল নিয়ে দেশে চরম অস্থিরতা চলছে।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা পরিষদের সদস্য (প্রশাসন ও যোগাযোগ) মো. জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, হাওরে বন্যার কারণে চালের সংকট দেখা দেয়ায় সরকার থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করে। ১৩ই জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের পচা চালবাহী জাহাজ দুটিও রয়েছে।

তবে খাদ্য বিভাগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় চাল খালাসের জন্য জাহাজ দুটিকে বন্দরের জেটিতে নোঙর করার অনুমতি দেননি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবুও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে বেসরকারিভাবে চালগুলো বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রির জন্য ধরনা দিচ্ছে জাহাজ দুটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে চালবাহী জাহাজ দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেভেন সিজ শিপিং লাইন্সের কর্ণধার আলী আকবর বলেন, বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি হলেও এই চাল খাওয়ার উপযোগী। খাদ্য বিভাগ গ্রহণ না করায় এখন দেশি-বিদেশি ক্রেতার কাছে বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে এখনো বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ দুটি নোঙর করে রাখা হয়েছে।-মানবজমিন
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে