মিজানুর রহমান খান : মার্কিন জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগরি এইচ স্ট্যানটনের জন্ম ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ক্লিনটন আমলে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জেনোসাইড–বিষয়ক পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন। ড. স্ট্যানটন কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক গণ–আদালতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রশ্ন : রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে অং সান সু চির ভাষণে মিয়ানমারের ‘শিশু গণতন্ত্রের’ যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: এটা গতানুগতিক অজুহাত। অভিযোগ প্রত্যাখ্যানকারীদের দিক থেকে এটা বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল। তাঁরা বলে থাকেন, গণহত্যা বন্ধের দিকে নজর দেওয়ার চেয়ে শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রাখাটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। অং সান সু চি তাই করেছেন। তিনি একজন প্রত্যাখ্যানকারী। তিনি আরও দেখাতে চেয়েছেন, তাঁর সরকারের কাছে সন্ত্রাস দমন অগ্রাধিকারের বিষয়। কারণ, সন্ত্রাসবাদ মিয়ানমার রাষ্ট্রের প্রতি হুমকি। প্রত্যাখ্যানের জন্য এটাও একটি জনপ্রিয় কৌশল। আমার মতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি খুবই বিপথগামী একটি গোষ্ঠী। কিন্তু সু চি তার কথা বলেই বর্মি বাহিনীর গণহত্যা চালানোর পক্ষে একটি যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেছেন। অথচ সেখানে সামরিক বাহিনী, পুলিশ, আরাকান মিলিশিয়ারা বহু বছর ধরে এ ধরনের জেনোসাইড চালাচ্ছে। আমরা জেনোসাইড ওয়াচের পক্ষ থেকে আরাকানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা চলছে, তাকে বর্ণনা করতে ২০১২ সালে প্রথম ‘জেনোসাইড’ শব্দটি ব্যবহার করি। ওই সময়ে আরাকানে একজন বৌদ্ধ মহিলার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সারা বার্মায় ১ হাজার মুসলমান নিধনের ঘটনা ঘটে। অং সান সু চি একজন মানবাধিকার প্রবক্তা, একজন নোবেলজয়ী হিসেবে তাঁর যে বিশ্বাসযোগ্যতা, সেসব তিনি বিসর্জন দিয়েছেন। সু চির সর্বশেষ ভাষণ তাঁর অপারগতার আরেকটি ব্যর্থতার নজির।
প্রশ্ন : তিনি দেশটির অন্যতম জাতিগত আদিবাসী হিসেবে রোহিঙ্গাদের নাম মুখে নেন না। সিএনএন বলেছে, গোটা ভাষণে তিনি একটিবার নিয়েছেন, সেটা আরসা, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি উচ্চারণ করতে গিয়ে। অথচ গণ-আদালতে সাক্ষীরা বলেছেন, এরা সংখ্যায় ৫০ জনের কম।
গ্রেগরি স্ট্যানটন: এই আরসা যেটা তিনি বলেছেন, সেটা যখন গঠিত হয়নি, তার আগ থেকেই তো আরাকানে গণহত্যা চলছে। আমার হিসাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন-নির্যাতনের সূচনা ঘটে ১৯৬২ সালে। ২০ বছর ধরে এটা চলেছে, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন এসে রোহিঙ্গাদের জীবনকে আরও নিকৃষ্ট করেছে।
প্রশ্ন : আপনি কি বিশ্বাস করেন যে জেনোসাইডের ওই প্রক্রিয়াটা ষাটের দশকেই তারা শুরু করেছিল? তার মানে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা বিবেচনায় জেনোসাইড সংজ্ঞায়িত করা যাবে না?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: হ্যাঁ, তারা ষাটের দশকেই শুরু করেছিল। যখন কোনো স্বতন্ত্র জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালু করা হয়, তখনই আসলে জেনোসাইডের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আপনি যদি এ রকম কোনো জাতিগত গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রকল্প হাতে নেন, এরপর অল্প কিছু লোককে হত্যা করেন, তাহলেই জেনোসাইড সংঘটিত হয়ে যাবে। আর এখন জঙ্গি জঙ্গি করে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের দাবি তোলার আগেই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত ২ লাখ ৭৭ হাজার রোহিঙ্গা ১৯৭৮ সালে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আর তখন তো বিশ্ব সু চিকে বার্মার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে দেখেনি।
তা ছাড়া মনে রাখতে হবে, কোনো জেনোসাইডই কখন কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। জেনোসাইড সমগ্র মানবগোষ্ঠী ও গোত্রকে স্পর্শ করে। এভাবে না দেখলে আমরা অভিন্ন মানবতাকে দেখতেই পাব না। মার্কিন সংবিধানপ্রণেতারা শুরুতেই সাফ বলেছেন, মানবাধিকার জনগণের বিষয়, রাষ্ট্রের নয়।
প্রশ্ন : তাহলে বিশ্বের সামনে তিনিই তো রোহিঙ্গাবিরোধী একটা অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন। তার আসল ভিত্তিটা কী?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: আমি মনে করি, তিনি তাঁর সরকারের বর্ণবাদী নীতির সপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে তাঁর পিতার সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কারণ, বার্মার মূল সংবিধানে রোহিঙ্গাসহ সব গোষ্ঠীকেই বার্মার নাগরিক হিসেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার বহু আগে থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে বসবাস করে চলছিল। সুতরাং পিতার অনুসৃত নীতি থেকে ছিটকে বাইরে এসেছেন। এভাবে জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চির দ্বারা নৈতিকভাবে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন। বার্মা মিয়ানমার হওয়ার বহু আগে যে জেনোসাইড প্রক্রিয়া শুরু হয়, এখন অং সান সু চি তাঁর দায়িত্বভার তুলে নিয়েছেন। এটা একটা স্ববিরোধিতা।
প্রশ্ন : তাহলে গোলটা কবে, কোথায় বাধল? সু চি সম্পর্কে পাশ্চাত্য কি তবে ভুল মূল্যায়ন করেছিল? তাঁর নৈতিক স্খলনের সূচনা তাহলে কবে? নাকি আপনি মনে করেন, তৃতীয় বিশ্বের অনেক রাজনীতিকের মতো তিনিওÿক্ষমতা-ক্ষুধার্ত রাজনীতিকদের কাতারে নিজের নাম লেখানোটাই শ্রেয়তর মনে করেছেন? ভুলটা কোথায়?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: আমি মনে করি, সরকারে তার ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার স্বার্থেই তিনি তাঁর নৈতিক কর্তৃত্ব সমর্পণ করেছেন। আমি তাই মনে করি যে তিনি নিজেকে ক্ষমতা-ক্ষুধার্ত রাজনীতিবিদে রূপান্তর করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি নিজেকে নিয়ে ভাবতে বসেছেন যে তিনিই তাঁর স্বদেশভূমির ত্রাণকর্তা। অথচ তিনি জানেন না যে কোনো একজন ব্যক্তিই কোনো একটি দেশের স্যাভিয়ার বা ত্রাতা হতে পারেন না। যেকোনো নেতা যদি তিনি তাঁর নৈতিক কর্তৃত্ব সমর্পণ করেন, তাহলে তিনি কিন্তু তাঁর দেশেরই একজন শত্রুতে পরিণত হতে পারেন। সরকারের মূল কাজ তার নাগরিকদের জানমাল রক্ষা করা। যদি কোনো সরকার তার নাগরিকদের জীবন রক্ষা করতে না পারে, সেটা তাকে কেড়ে নিতে হয়, তখনই কিন্তু সরকার দেশ শাসনের মৌলিক নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। সার্বভৌমত্ব আসতে হবে জনগণ থেকে, সরকারের কাছ থেকে জনগণের কাছে সার্বভৌমত্ব যাবে না। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত নয়, জনগণ নিয়ন্ত্রিত বিষয়। তাই যে সরকার নাগরিকের জীবন টিকিয়ে রাখে, তারাই বৈধতা দাবি করতে পারে।
প্রশ্ন : আপনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে গণহত্যা বিষয়ে কী ভূমিকা রেখেছিলেন?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ৯৫৫ ও ৯৭৮ নম্বর প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করি আমি। নিরাপত্তা পরিষদে আমার করা আরও দুটি খসড়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে বুরুন্ডিতে তদন্ত কমিশন (১০১২ নম্বর প্রস্তাব) এবং ১০১৩ নম্বর প্রস্তাবে সেন্ট্রাল আফ্রিকান আর্মস ফ্লো বিষয়ে তদন্ত কমিশন হয়। খেমাররুজ ট্রাইব্যুনালের বিধি আমি করেছি। ১৯৯১ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বোডীয় জেনোসাইড প্রজেক্ট আমি প্রতিষ্ঠা করি। আর অবসর জীবনে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি জেনোসাইড ওয়াচ।
প্রশ্ন : আপনি কীভাবে রুয়ান্ডা ও কম্বোডীয় জেনোসাইডের সঙ্গে রাখাইনের অবস্থার তুলনা করবেন? রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে আপনি নিরাপত্তা পরিষদের পরিহাসমূলক অবস্থানকে কীভাবে দেখেন? তারা সম্প্রতি কোনোমতে একটা নিন্দাসূচক প্রস্তাব পাস করেছে।
গ্রেগরি স্ট্যানটন: জেনোসাইডের যেসব প্রক্রিয়া আমি প্রত্যক্ষ করেছি, তার সঙ্গে আরাকানের অবস্থার এক অর্থে মিল রয়েছে। রুয়ান্ডা ও কম্বোডিয়ার মতো একই অবস্থা অতিক্রম করছে আরাকান। শুধু পার্থক্য হলো আন্তর্জাতিক পরিবেশের তফাত। যখন আমরা রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল করেছি, তখন স্নায়ুযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সে সময় পরস্পরের কাজকে বাধা দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছিল না। চীনও এক পা পেছনে চলার মনোভাব নিয়ে চলছিল। অথচ চীন এখন মনে করছে, তাকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সুরক্ষা দিতে হবে। অবশ্য সেটা বহু বছর আগে থেকেই করে চলছিল। অন্যদিকে রাশিয়া এখন মনে করে যে জাতিসংঘের দ্বারা বিশ্বের কোথাও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ হওয়া উচিত নয়। এভাবে দুটি বৃহৎ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র পথ আগলে রেখেছে। অবশ্য আমি কিন্তু তাই বলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের যুক্তি দিচ্ছি না। কারণ, সামরিক হস্তক্ষেপ বেশির ভাগ সময় পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়। তবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে খুব শক্তিশালী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এখানে উপযুক্ত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। গৃহবন্দী থেকে সু চির মুক্তি এবং সেখানে নির্বাচন হওয়ার পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখন দেখি, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তার নীতি বদলায়নি, বরং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তারা আরও নিকৃষ্ট ধরনের জেনোসাইড সংঘটন করে চলছে। তারা গ্রাম পোড়াচ্ছে, নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে—এসবই জেনোসাইড।
প্রশ্ন : চীন ও রাশিয়ার অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে কোনো যুক্তিই নেই?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: দুঃখের সঙ্গে বলব, চীনের মানবাধিকারের কিন্তু কোনো শক্ত রেকর্ড নেই। অন্য দেশে জেনোসাইড ঘটলে তা নিয়ে তার মাথাব্যথা আমরা দেখিনি। যেমন দারফুরে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু চীন আটকে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, তিব্বতে তারা জেনোসাইড সংঘটিত করে চলছে। যদিও সেটা তারা কখনো স্বীকার করেনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে সরকারি বাহিনী নির্যাতন চালাচ্ছে। সুতরাং চীন কোনোভাবেই জেনোসাইডবিরোধী রাষ্ট্র নয়। তারা মনে করে, সীমান্ত খুবই পবিত্র ধারণা। ওর চৌহদ্দির মধ্যে তুমি মারো-কাটো, সেটা বাইরের কারও কোনো বিষয় নয়। সেটা মৌলিকভাবে একটি ভ্রান্ত নীতি।
প্রশ্ন : কিন্তু রাশিয়ার কথা কী বলবেন? অতীতে তারা কী করেছে?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ মুহূর্তে রাশিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হয়। অন্য দেশের জেনোসাইড নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। রুয়ান্ডা এবং খেমাররুজ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে তাদেরকে অবস্থান নিতে আমি দেখেছি। তবে খেমাররুজ ট্রাইব্যুনাল নিরাপত্তা পরিষদ নয়, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন গঠন করেছিল। রুশরা জাতিসংঘের পাশে থেকেছে। এর আগে আমরা দেখেছি, রাশিয়া ভিয়েতনাম ও চীনারা খেমাররুজদের পাশে থেকেছিল। খেমাররুজদের বিচার তখনকার রুশ নীতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমি জানি বিষয়টি খুবই জটিল ধরনের। আন্তর্জাতিক সম্পর্কটাই খুব জটিল।
প্রশ্ন : খুব নির্দিষ্ট করে বলুন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী কী করতে পারে?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: মিয়ানমারের সাধারণ মানুষকে কষ্টে না ফেলে ‘নির্দিষ্ট অবরোধ’ (টার্গেটেড স্যাংশন) দিতে পারে। শীর্ষ জেনারেল এবং যাঁরা রাখাইন অপারেশনের কমান্ডার ছিলেন এবং সু চির উদ্দেশে পরিষ্কার বলতে হবে, আমরা এ ধরনের গণহত্যা সহ্য করব না।
প্রশ্ন : আপনি বর্তমান বাংলাদেশের শক্তি ও দুর্বলতা জানেন। আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে দেশটির কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
গ্রেগরি স্ট্যানটন: বাংলাদেশ যদিও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু কনভেনশনের সদস্য নয়, তদুপরি সব রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করে তারা আইন মেনেছে। বিশ্বের অন্য বহু দেশের চেয়ে তারা এবারে উত্তম নজির স্থাপন রেখেছে। তারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সমুন্নত রেখেছে। আমি বলব, এটা বাংলাদেশের একটি ‘এথনিক জেনোরেসিটি’ বা জাতিগত ঔদার্য। তবে এখন বিশ্বকে তার বলতে হবে, আমরা আমাদের অংশ করেছি। এবারে তোমরা তোমাদের অংশটা পালন করো। আমরা তো এর চড়া মাশুল অনির্দিষ্ট মেয়াদে বইতে পারব না। তাই দয়া করে আমাদের তোমরা সাহায্য করো। জাতিসংঘের এখনই সময় উঠে দাঁড়ানোর। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মার্কিন সরকারের এখানে বিরাট ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। আমি এ প্রসঙ্গে বলব, যুক্তরাষ্ট্র আজ স্মরণ করতে পারে ১৯৭১ সালের কথা। একাত্তরে বাংলাদেশে যখন জেনোসাইড ও পাইকারি হত্যা চলেছে, তখন মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। আমি মনে করি, সেই ঘটনায় আজও বাংলাদেশের প্রতি সব আমেরিকানের একটি ঋণ রয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমরা যে সেদিন আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি, তার একটা নৈতিক দায়দায়িত্ব স্বীকার করার বিষয় আজও বাকি রয়ে গেছে। নিক্সন-কিসিঞ্জার বাংলাদেশে গণহত্যাকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছিলেন। এটা ভুল ছিল। তবে এরপরেও রুয়ান্ডাসহ আরও অনেক স্থানে জেনোসাইডবিরোধী অবস্থান নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। আমি মনে করি, আজ বাংলাদেশ যখন রোহিঙ্গা সংকটে পড়েছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে উল্লেখযোগ্যভাবে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে তার অতীতের ভুল ভূমিকা শুধরে নিতে পারে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
গ্রেগরি স্ট্যানটন: ধন্যবাদ।
-প্রথমআলো
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস