আকবর হোসেন: আবহাওয়া ভালো থাকলে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে ট্রলারে করে হাতিয়া দ্বীপে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সেখান থেকে আবার স্পিড-বোটে করে আধা ঘন্টা সময় লাগে ঠেঙ্গার চরে যেতে।
প্রায় ২৫ বছর আগে জেগে উঠা এ চরটিতে কোন জনবসতি নেই। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ১২ কিলোমিটার। বনবিভাগের তদারকিতে গত ১৫-২০ বছর ধরে সেখানে বনায়ন হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে ট্রলারে করে হাতিয়া দ্বীপে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সেখান থেকে আবার স্পিড-বোটে করে আধা ঘন্টা সময় লাগে ঠেঙ্গার চরে যেতে।
সে অঞলের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বর্ণনায় এই হচ্ছে ঠেঙ্গার চর। যেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নির্জন দ্বীপটিতে ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন না করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে নানা আপত্তি সত্ত্বেও সরকারের দিকে থেকে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব সেই চর ঘুরেও এসেছেন। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা বলছে ঠেঙ্গার চর এমন এক জায়গায় অবস্থিত যেটি জনবসতির জন্য নিরাপদ নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, কক্সবাজার এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে পাঠানো হলে চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবিকা, খাবার এবং শিক্ষার সুযোগ-সব কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত হবে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব যখন ঠেঙ্গার চর পরিদর্শন করেন তখন তার সাথে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। মি. আলী বলছিলেন, "ঠেঙ্গার চর বেশ সুন্দর। চতুর্দিকে প্রচুর মাছ। এটাকে মাছের অভয়ারণ্য বলা যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের এ এলাকায় পুনর্বাসন করা হলে তাদের জীবন-জীবিকায় কোনও সমস্যা হবেনা বলে তিনি মনে করেন।
চর পরিদর্শনের পর সামরিক সচিব বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে গাছ কাটা বন্ধ করা, নৌযান নোঙর করার জন্য জেটি নির্মাণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি। সরকার মনে করছে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল যেভাবে গড়ে উঠছে তাতে পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। সে জন্যই রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে সরিয়ে নেবার পরিকল্পনা ।
কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অনেকেই বলছে ঠেঙ্গারচর বসবাসের জন্য মোটেও উপযুক্ত কোন জায়গা নয়। বর্ষার সময় পানিতে তলিয়ে যায় এ চর। সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ভাষায়, "বর্ষার সময় পূর্ণিমা-অমাবস্যায় নিচু এলাকা ডুবে। কিন্তু পুরো চর ডুবে না।"
কিন্তু ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেবার সরকারি উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন রোহিঙ্গারা? কক্সবাজারের টেকনাফে লেদা অ-নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি দুদু মিয়া জানালেন, সরকার চাইলে তাদের সেখানে যেতে হবে। কিছু করার নেই। তবে তাদের মনে অনেক শঙ্কা আছে।
তিনি বলেন, "আমরা সবাই ভয় পাই। কারণ জায়গাটা দেখি নাই কখনো। ওখানে বলে ভূমিকম্প হয়, বইন্যা উঠিয়া ডুবিয়া যায়। ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এরই মধ্যে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গারা যাতে বসবাস করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এটি নিতান্তই সাময়িক ব্যবস্থা বলে বলছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল। কারণ শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সরকার আশাবাদী।-সূত্র বিবিসি বাংলা
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিপি