মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৫:৪৩

হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি

হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি

কবীর হোসেন চাঁন মিয়া, নেত্রকোনা থেকে : পূর্বধলায় শুরু হয়েছে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তৃণমূলে চলছে কৌশলী প্রচারণা। চায়ের দোকানগুলোতে জমে উঠেছে নির্বাচনী আলোচনা। সেই আলোচনায় শামিল হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পাশাপাশি দলের নীতি-নির্ধারণী মহলে চালাচ্ছেন লবিং।

পূর্বধলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে নেত্রকোনা-৫ আসন। বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত আসনটি। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা তিনবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে হাতছাড়া হয়ে যায় আসনটি। চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করায় ফের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে এবার হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। সেই লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন দলটির একাধিক নেতা।

স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে ভোটের রাজনীতিতে ট্রাম্পকার্ড হতে পারে রাস্তাঘাটের বেহাল ইস্যুটি। ১১টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার। এবারের বর্ষায় রাস্তার পরিস্থিতি আরো করুণ আকার ধারণ করেছে। এমনকি রাস্তার গর্তে আটকে যাওয়া ট্রাক হাতি দিয়ে ঠেলে উদ্ধার করতে হচ্ছে। তাই রাস্তাঘাট-ব্রিজ ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি ভোটের আগে প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।  

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দেদার প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। উঠোন বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক ডিআইজি আবদুল হান্নান খান।

এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রকৌশলী মিছবাহুজ্জামান চন্দন, জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা ওয়াহিদুজ্জামান আজাদের নামও শোনা যাচ্ছে। নৌকা প্রতীকের জন্য স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তিন হেভিওয়েট নেতার মধ্যে।

রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল অনেকটা ইমেজ সংকটে ভুগছেন। ভোটের মাঠে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আহম্মদ হোসেন। সাবেক ডিআইজি আবদুল হান্নান খানেরও রয়েছে ক্লিন ইমেজ। শেষ পর্যন্ত কে হবেন নৌকার কাণ্ডারি- তা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।

বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল নিজেকে সফল দাবি করে বলেন, আমার সময়ে অবহেলিত পূর্বধলা উপজেলার সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পেরেছি। উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই জনগণ আমার পাশে থাকবে। তাই এবারো নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।

অপরদিকে আহমদ হোসেন বলেন, পূর্বধলা উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সুসংগঠিত করে এ আসনটি নিশ্চিত করার জন্য রাতদিন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবো।

এ আসনে আরেক প্রার্থী আবদুল হান্নান খান এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যাপক গণসংযোগ করে আসছেন। আবদুল হান্নান খান বলেন, নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো।

এদিকে এ আসনটিতে বিএনপির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা ছিলেন সাবেক এমপি ডা. মোহাম্মদ আলী। প্রতিবারই তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তার আকস্মিক মৃত্যুর পর মনোনয়নের লড়াইয়ে নামেন বেশ কয়েকজন নেতা। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও তরুণ বিএনপি নেতা এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবু তাহের তালুকদার, সাবেক এমপি মরহুম ডা. মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিণী রাবেয়া আলী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. আবদুল জলিলের নামও শোনা যাচ্ছে। এই আসন থেকে ২০দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী জামায়াত নেতা পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাছুম মোস্তফার নামও শোনা যাচ্ছে। তবে মনোনয়নের মূল লড়াই হবে শহীদুল্লাহ ইমরান, আবু তাহের তালুকদার ও রাবেয়া আলীর মধ্যে। মনোনয়ন লড়াইয়ে নামলেও অনেকটা ইমেজ সংকটে রয়েছেন আবু তাহের তালুকদার।

২০০১ সালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আবু তাহের তালুকদার বলেন, বিগত দিনে বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে। রাজপথে অবরোধের সময় গুলিবিদ্ধ হতে হয়েছে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমার ভূমিকা ছিল। তাই আশা করছি, ধানের শীষের মনোনয়ন আমিই পাবো।

এদিকে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরায় ও নিয়মিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করায় এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তরুণ নেতা শহীদুল্লাহ ইমরান। পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে তার রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা হওয়ায় এলাকার তরুণ সমাজের মধ্যে জনপ্রিয় তিনি। তাছাড়া তার বাবা-মা দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পিতা একাধারে শিক্ষক ও রাজনীতিক আলহাজ মোবারক ইসলাম জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। মা রোকেয়া বেগম মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

শহীদুল্লাহ ইমরান বলেন, বাবা-মা দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছাত্রজীবন থেকেই এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালন করছি। আশা করছি একজন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবেন হাইকমান্ড। তবে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার পক্ষেই কাজ করবো। ওদিকে সাবেক এমপি প্রয়াত ডা. মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিণী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলীও মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমেছেন।

ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী রাবেয়া আলী বলেন, পূর্বধলায় বিএনপির রাজনীতিকে সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাকে পূর্বধলা আসনে মনোনয়ন দিলে অবহেলিত জনপথ পূর্বধলার সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে  কাজ করে যাবো। আশা করছি, দলের হাইকমান্ড আমার মনোনয়নের ব্যাপারে সদয় দৃষ্টি রাখবেন। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে