মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৭:১০:৫৪

রোহিঙ্গাদের পাল্টে যাওয়া জীবন

রোহিঙ্গাদের পাল্টে যাওয়া জীবন

বিশেষ প্রতিনিধি : পাহাড়-নদী ঘেরা সবুজ বনের মাঝে ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়েঘরে ছিল তাদের বসবাস। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত। সূর্যের আলো ফোটার পর কৃষকেরা চলে যেতেন বাড়ির কাছেই ধানখেতে। কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা।

আনন্দ-বেদনায়, সুখে-দুঃখে মিলেমিশে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামবাসীর বেশ ভালোয় কাটছিল জীবনের দিনগুলো। হঠাৎ গত মাসের ২৫ তারিখ মিয়ানমার সীমান্তের তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে তাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। পাল্টে যেতে থাকে তাঁদের জীবন।

যে ঘর যে গ্রাম রোহিঙ্গাদের পদচারণে মুখর থাকত, সেখানে তখন নিরাপত্তা বাহিনী আগুন দিতে থাকে। তারা নির্বিচারে নির্যাতন, সম্ভ্রমহানী, নিপীড়ন চালায়। প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেই পাহাড়, জঙ্গল আর নদী পেরিয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সীমান্তের ওপারে মাইন বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত নয়জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নিহত ও একজন আহত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য ও জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানাতে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।

সকাল ১০টায় প্রথমে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। এ সময় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের প্রতিনিধি মেজর শফিকুর রহমান, সিভিল সার্জন অংসুইপ্রু মারমা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মফিদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, ঘুনধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনাপাড়া, জলপাইতলি ও পাহাড়পাড়ায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বড়শণখোলা, সাপমারাঝিরি ও ফুলতলি—ছয়টি স্থানে মোট ৯ হাজার ১৭৩টি পরিবারের ৫০ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে ও ঘুনধুমের পাহাড়পাড়ার ৮০০ পরিবারসহ ২ হাজার ৭৭৩ পরিবারের ১৫ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা হয়েছে।

ঘুনধুম ইউনিয়নে অধিকাংশই এখনো নিবন্ধন হয়নি। সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাহাড়পাড়ায় প্রায় ৪ হাজার পরিবারে ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার জন্য তাদের গত রোববার থেকে উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জেলা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনীসহ সরকারি বাহিনী। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হয়। নৃশংস নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে দলে দলে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চার লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে