নূপুর দেব, উখিয়া থেকে: কয়েক দিন ধরে উখিয়া ও টেকনাফের অস্থায়ী বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘোরার সময় দেখা যায় প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি নেই। বিভিন্ন স্থানে পানির ট্যাংক বসানো হয়েছিল, সেগুলোতেও পানি সরবরাহ থাকে না।
ফলে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা ফিরে আসছে। ত্রাণের পানিও (বোতলজাত) তেমন চোখে পড়েনি। ত্রাণ হিসেবে যে পরিমাণ পানি পাওয়া যায় তাও এক বেলায় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
পানি শূন্যতায় গলা শুকিয়ে গেলেই শিশুরা কান্না জুড়ে দেয় বলে বড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। খাওয়ার পানির পাশাপাশি অন্যদিকে নিত্যব্যবহার্য পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শৌচকরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। তাই যেনতেনভাবে এ কাজ সেরে আসতে হচ্ছে। গোসল বা হাত-মুখ ধোয়ার জন্যও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না।
কুতুপালং বাজার এলাকার পশ্চিম পাশে নূর হাশিম নামে এক রোহিঙ্গাকে গতকাল দুপুরে দেখা যায় তাঁবুর সামনে পাঁচ বছরের শিশু নূর কলিমা ও সাড়ে তিন বছরের ওসমানকে বাথরুমের বদনার পানি দিয়ে হাত ধোয়াতে।
কারণ জানতে চাইলে নূর হাশিম বলেন, 'এখানে পানির বেশি সমস্যা। নলকূপের পানি ঠিকমতো খেতে পারি না। হাত কিভাবে ধৌত করব। তাই বাথরুমে যে পানি আছে তা দিয়ে হাত ধোয়াচ্ছি। তবে এই পানি আমরা খাই না। '
এই রোহিঙ্গা আরো বলেন, 'এই জায়গায় একসঙ্গে দুই-তিন হাজার মানুষ। কিন্তু মাত্র একটি নলকূপ ও দুটি বাথরুম। কিভাবে ব্যবহার করি? অনেকেই পাশের টিলায় গিয়ে ‘বাথরুম’ করে আসি। আবার নলকূপ থেকে পানি আনার সময় আসা-যাওয়া ও লাইনে দাঁড়ানো মিলে এক ঘণ্টা লাগে। '
এর পাশে থাকা আরেকটি পরিবারের কর্তা জাফর আলম বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলেসহ পরিবারে ছয়জন থাকি। কিছু ত্রাণ পাই, ঠিক আছে। কিন্তু ত্রাণের খাবার খেতে তো পানি লাগে, তাই না! কিন্তু পানি কম পাই। এখন পানি বেশি দরকার।
মোহাম্মদ সুরত নামের অপর এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের এখানে (কুতুপালং বাজারের পূর্ব পাশে) ৯০০ থেকে এক হাজার জন থাকে তাঁবুতে। কিন্তু নলকূপ আছে একটি। দেখা গেছে, অনেকেই প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। পানির জন্য আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ’
সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ দুই উপজেলায়ই বিভিন্ন স্থানে ঠাঁই নেওয়া রোহিঙ্গাদের একেকটি নলকূপের সামনে পানির জন্য দীর্ঘ লাইন ধরতে হচ্ছে। অনেকে পানীয় জলের অভাবে বাধ্য হয়ে অপরিষ্কার বা দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। পানির চরম অভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকারও সুযোগ নেই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে। পানির অভাবে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, অনেকেরই ক্লান্তি ও অবসাদ পেয়ে বসেছে।
দুপুরে তীব্র রোদের সময় শিশু-কিশোরদের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বালুখালী, থাংখালী ও কুতুপালং এলাকার বিভিন্ন ছড়া ও খালের পানিতে নামছে। এসব ছড়া ও খালের কাদাপানিতেই নিরুপায় শিশু-কিশোররা গোসল করছে। বৃষ্টি হলে পানির গভীরতা বাড়ে, তখন বড়রাও সেখানে গোসল সারে।
এদিকে খাওয়ার পানিকে পুঁজি করে উখিয়ার বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানে বোতলজাত বিভিন্ন কম্পানির পানির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি বোতলে ৫ থেকে ১০ টাকা করেও বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি টাকায় কিনছে খাওয়ার পানি।
বালুখালী বাজার থেকে এক বোতল (এক লিটার) পানি কিনে তাঁবুতে যাওয়ার পথে বিলকিস বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, বাচ্চার অসুখ হয়েছে। পাঁচ-ছয়টি খাবার স্যালাইন পেয়েছি। পানি না থাকায় স্যালাইন খাওয়ানোর জন্য এই পানি কিনেছি ২৫ টাকা দিয়ে।
গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে থাংখালীর পশ্চিম পাশে তাজনিমার ঘোনা এলাকায় যাওয়ার পথে প্রধান সড়কের পাশে কয়েকজন রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু-কিশোর দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় তাদের একজনের মাথায় দুই-তিনটি খালি কলসি ও তালা দেখা গেছে।-কালের কণ্ঠ
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস