ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে চায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কোন প্রকল্প নিতে চাইলে বাংলাদেশকে বিশ্ব ব্যাংক ৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকার সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির আবাসিক প্রধান চিমিয়াও ফান।
বুধবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্বব্যাংক জানিয়ে চিমিয়াও ফান বলেন, ‘সহিংসতার শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের জন্য মানবিক এবং জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার চাইলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকটে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। ’
তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনে (আইডিএ) ‘রিফিউজি ফান্ড’ নামে নতুন একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এর পরিমাণ ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার। যেকোনো দেশ প্রয়োজনে তিন বছরে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই দেশে শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি হতে হবে। বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের অনেক বেশি।
ফলে বাংলাদেশ এই তহবিল পাওয়ার যোগ্য। ’
এই সহায়তা ঋণ নাকি অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে শরণার্থীদের সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ কোন ধরনের প্রস্তাবনা দেয়, তার ওপর। প্রস্তাবনা দেখে মোট সহায়তার অর্থেক অনুদান ও অর্ধেক ঋণ হতে পারে, আবার পুরোটাই অনুদান হতে পারে। ’
আগামী অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের আসন্ন বার্ষিক সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় থাকবে বলে জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে চিমিয়াও ফান অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন। তবে অবকাঠামো দূর্বলতা, মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমের ধীরগতিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্চ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংস্থাটির ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংস্থার আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,‘প্রবৃদ্ধিরএই প্রাক্কলন একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক মূল্যায়ণে এটা খুবই ভালো প্রবৃদ্ধি। ভারতে এবার ৭ দশমিক শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছিল,সেটাও হয়ত থাকবে না। ’
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে জাহিদ হোসেন বলেন,‘ রফতানি খাত এখন ভালো করছে। গত অর্থবছরে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এবার প্রথম দুই মাসের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা ভালোর দিকেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। ’
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেলেও চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ সরকার।
রফতানির পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহে গত অর্থবছরে কমে গিয়েছিল। রেমিটেন্স কমেছিল ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এবার তা ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
জাহিদ হোসেন বলেন,‘জনশক্তি রফতানি এবার বেশ বেড়েছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির একটি লক্ষণ দেখা দিয়েছে,কারণ ব্যাংক ঋণের সুদহার কিছুটা কমেছে। ’
প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাড়তি চাপ অর্থনীতিতে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা ব্যাখা করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এতো রোহিঙ্গার আগমনে জাতীয়ভাবে মূল্যস্ফীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না,তবে যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা ঢুকেছে সেসব এলাকায় মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিশ্বব্যাংকের এই হালনাগাদ প্রতিবেদনে চলতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত চাপ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যেমন- খাদ্যে ভর্তুকি,রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সংস্থান। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়গুলো হলো নির্বাচনের আগের বছর হওয়ায় চলতি বছরে বড় ধরনের সংস্কারের সম্ভাবনা কম,রফতানি কমে যাওয়া ও রেমিটেন্স প্রবাহে দূর্বলতা।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস