শনিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৫:৫২

আবারও বিদেশি দম্পতি জখম, টাকা লুট

আবারও বিদেশি দম্পতি জখম, টাকা লুট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার উত্তরায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় ঢুকে এক তাইওয়ানি দম্পতিকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। যাওয়ার সময় বাসা থেকে দুর্বৃত্তরা ছয় লাখ টাকাও নিয়ে যায়। ওই দম্পতি বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মো. জাহাঙ্গীর নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা পরস্পরের আত্মীয়। তাদের একজন ওই দম্পতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জিন জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারী, যাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাকি দুজনের সঙ্গেও ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার বিধান ত্রিপুরা এমটিনিউজকে বলেন, “টাকার জন্যই তারা তিনজন ওই বাসায় হামলা চালায়।” দুই বিদেশি নাগরিক খুন ও তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার প্রথম প্রহরে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে শুক্রবার বিকালে। আহত ব্যবসায়ী ওয়াং মিং চি (৬৮) এবং তার স্ত্রী লিও লি হুয়া’কে (৬০) ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুজনেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এই দম্পতি বাংলাদেশে আছে প্রায় দশ বছর ধরে। গাজীপুরের গাছা এলাকায় তাদের কারখানায় পিভিসি ডোর ও সিলিং তৈরি করা হয়। ওয়াং মিং চি ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার স্ত্রীও এর একজন পরিচালক। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে তার নাম জাহাঙ্গীর। শুক্রবার ভোরের দিকে সাভারের বাইপাইল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীরের দুই শ্যালক সাজু ও রাজুকেও পুলিশ খুঁজছে। জাহাঙ্গীরের মতো তারাও একসময় জিন জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের কর্মচারী ছিলেন। চাকরি ছেড়ে দিলেও তারা চুক্তিতে ওই কারখানার প্লাস্টিকের দরজায় প্রিন্টের কাজ করে দিতেন। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে চারতলা একটি ভবনের তৃতীয় তলায় তাইওয়ানের ওই দম্পতির বাসা। দোতলায় জিন জিং ইয়াং কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং নিচতলায় কয়েকজন কর্মচারী থাকেন। অন্য কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরও ওই বাড়ির নিচতলায় থাকতেন। তার কাছে বাসায় ঢোকার চাবিও ছিল বলেন উপ কমিশনার বিধান ত্রিপুরা এমটিনিউজকে জানান। তিনি বলেন, “যে তিনজন বাসায় ঢুকে হামলা চালায় তাদের একজনের মুখে মুখোশ ছিল। তারা টাকা নেওয়ার জন্যই গিয়েছিল। ওই দম্পতি টের পেয়ে যাওয়ায় তাদের জিম্মি করে লকার থেকে টাকা বের করে দিতে বাধ্য করে। “হামলাকারীরা ওই ছয় লাখ টাকা নেওয়ার পর আরও টাকা আছে মনে করে চাপ দেয় এবং মারধর করে। তাদের মাথা তারা দেওয়ালে ঠুকে দেয়। এতেই তারা আহত হন।” অবশ্য জিন জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সামির হাসিব বলছেন, ওই দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ক্ষত দেখে তার মনে হয়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরে কারখানায় যান ওয়াং মিং চি এবং তার স্ত্রী লিও লি হুয়া। কাজ সেরে রাতে বাসায় ফিরে তারা হামলার শিকার হন। রাতে ওই ভবনের এক বাসিন্দার কাছ থেকে হাসিব খবর পান, তিনজন সশস্ত্র ‘দুর্বৃত্তের হামলায়’ তার কোম্পানির মালিক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে উত্তরায় গিয়ে তিনি দেখেন, পুলিশ ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনিও তাদের সঙ্গে হাসপাতালে যান। পুলিশ তাকে নিয়ে অভিযানেও যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় সামির হাসিব এমটিনিউজকে বলেন, “দেখে মনে হয়েছে তাদের চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। স্যারের আঘাত একটু বেশি। উনি আইসিইউতে আছেন। আর ম্যাডামকে বিকালে আইসিইউ থেকে বেডে নেওয়া হয়েছে।” কেন ওই দম্পতির ওপর হামলা হল জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম এমটিনিউজকে বলেন, “টাকা-পয়সা বকেয়া নিয়ে কিছুদিন ধরে সাজুদের সঙ্গে কোম্পানির মালিকের বিরোধ চলছিল। তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ী টাকা তুলেছেন খবর পেয়ে সাজু, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন গতরাতে ওই বাসায় ঢোকে। তারপর ওই দম্পতিকে মারধর করে ছয় লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়।” বকেয়া টাকা নিয়ে সাজুর সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সামির হাসিব বলেন, “টাকা নিয়ে ঝামেলা থাকবে কেন? সে কোম্পানির কাজ করে দিত। স্যার তো টাকা পয়সা বাকি রাখেন না।” ওই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে তাইওয়ানে থাকেন। হামলার ঘটনা জানতে পেরে তারা বাংলাদেশে আসছেন বলে জানান হাসিব। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে এবং পাঁচ দিন পর ২ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী আততায়ীরা। ০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে