পৌর নির্বাচনের প্রচারনায় ‘থাকছেন’ সরকারি সুবিধাভোগীরা
নিউজ ডেস্ক: প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মন্ত্রী-সাংসদসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এক্ষেত্রে দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরা সরকারি সুবিধা ছেড়ে পৌর নির্বাচনে দল মনোনীত বা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন।
এর সমালোচনা করে নির্বাচনের কমিশনের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা।
এ প্রস্তাবকে ‘অন্যায়’ আখ্যায়িত করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এমটিনিউজকে বলেন, এ ধরনের বিধি হলে নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারাবে। ক্ষমতাসীনরাই সবসময় সুবিধা পাবে।
সব ঠিক থাকলে আসছে ডিসেম্বরে দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে আড়াইশ পৌর এলাকায় ভোট আয়োজন করবে ইসি। এ নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারি সুবিধা ছেড়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন- খসড়া বিধিতে এ সুপারিশ করেছি আমরা।”
মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে সংযোজন-বিয়োজন শেষে এ আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
আগের আইনে স্থানীয় সরকারে মন্ত্রী-সাংসদ, মেয়রদের প্রচারে অংশ নেওয়ায় বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচন হচ্ছে বলে সংসদ নির্বাচনের মতো করে আচরণবিধি করা হচ্ছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
আইনে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ‘সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বোঝানো হয়েছে।
ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী বিধিমালা সংশোধন করা হলে এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরাও পৌর নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। কেবল এই কাজে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ‘প্রাপ্যতা অনুযায়ী’ তারা নিরাপত্তা পাবেন।
সরকারি সুবিধা ব্যবহার না করলেও পদে থাকার কারণেই এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এ বিধিমালাই চূড়ান্ত হলে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের তা প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এমটিনিউজকে বলেন, “এটা একটা অন্যায় আচরণবিধি হচ্ছে। মন্ত্রী-এমপি-মেয়রকে স্থানীয় নির্বাচনের প্রচার থেকে বিরত রাখাই বাঞ্ছনীয়। তাদের সুযোগ দিলে সব সময় ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পাবে।”
২০০৭-১২ মেয়াদে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করা ছহুল বলেন, “মন্ত্রী মর্যাদার পদবী নিয়ে কেউ পৌর এলাকায় প্রচারে গেলে বিপক্ষ প্রার্থীর অস্তিত্ব কোথায় যাবে! এ ধরনের বিধি হলে নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারাবে। বর্তমান ইসির এ উদ্যোগে আমি আহত। কমিশনে কেউ কি এর বিরোধিতা করেননি?”
ইসির এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘ভোটে প্রভাব ফেলতে’ সরকারের আর কিছু ‘বাকি রইল না’।
তিনি বলেন, “প্রচারণার সুযোগ পেলেই কেউ প্রটোকল নেবে, প্রটেকশন নেবে। তাদের প্রভাবের কাছে অন্য প্রার্থীরা তো কোনো সুযোগই পাবে না। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না এ ভোটে। নির্বাচন কর্মকর্তারা পড়বে বিপাকে, সহিংসতাও বাড়বে।”
বিএনপি আসন্ন পৌরসভা ভোটে অংশ নেবে কি না- সে বিষয়ে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের’ প্রচারে অংশ নেওয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে নিরপেক্ষতা ‘ক্ষুন্ন হবে’। ক্ষমতাসীন দলই এ আচরণবিধির সুবিধা নেবে।
“নিরপেক্ষতা তো থাকবে না। মন্ত্রীরা যখন কারও পক্ষে এলাকায় যাবে তখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অবস্থা নাজুক হয়ে যাবে। আমরা এ ধরনের প্রস্তাবের প্রতিবাদ করছি।”
০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি