শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৩:৫১:২৩

বাবার গলা কাটতে দেখেছি বলেই কেঁদে ওঠে রোহিঙ্গা কিশোর

বাবার গলা কাটতে দেখেছি বলেই কেঁদে ওঠে রোহিঙ্গা কিশোর

নিউজ ডেস্ক: সেনারা আমার বাবাকে গুলি করলে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন তারা বাবার গলা কেটে দেয়। এক শরণার্থী শিবিরে বসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক স্বাক্ষাতকারে এভাবেই নিজের বাবা-মা’র হত্যার কাহিনী বলতে বলতে কেঁদে ওঠে সুখুতারা।

তার মা’কে সেনারা টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যায় অন্য একটি ঘরে যেখানে আরো নারীদের রাখা হয়েছে। সুখুতারা সে ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার শুনেছে। আর এরপর সেনারা এই ঘর থেকে বের হয়ে এসে ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

বলা হচ্ছে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা এক শরণার্থী  সুখুতারার কথা। ১২ বছর বয়সী সুখুতারা এক ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকেই দেখছিল তার পরিবারের পরিণতির শেষ মুহূর্তগুলো। জলপাই-সবুজ রঙের সেনারা যখন তাদের গ্রামে আসে সুখুতারা তখন তাদের গরুগুলোকে ঘাস খাওয়াতে মাঠে নিয়ে গিয়েছিল। আর এ কারণেই সে প্রাণে বেঁচে যায়।

সাম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের অংশ হিসেবে খালি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা বাস করে এমন গ্রামগুলো। রোহিঙ্গারা অত্যাচার থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য অনুসারে, রাখাইনে সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনী সমর্থিত মিলিশিয়ারা হত্যা করেছে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে।

বৃহস্পতিবার এই সংকট নিয়ে বিতর্কে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ওয়াশিংটনে সিনেটরদের এক দল ট্রাম্প প্রশাসনকে এই সংকটের সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে এসব অত্যাচারের বিষয়টি স্বীকার করছে না। মিয়ানমার থেকে যারা পালিয়ে এসেছে তাদের ভাষ্যমতে, সামরিক বাহিনী সেখানে হত্যা করছে, নির্যাতন করছে ও অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে।

মিয়ানমারের সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল ফোন টিন্ট এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে আমরা সেগুলোর একটিও করিনি। এইসব অপরাধের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্যে সমালোচনার স্বীকার হয়েছেন দেশটির কার্যত নেত্রী অং সান সুচি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই সাক্ষাতকারে সুখুতারার কথা সমর্থন করেছে তার গ্রামের অন্যান্য শরণার্থীরাও। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, রাখাইনে নির্যাতনের প্রমাণ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান সামরিক বাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

মিয়ানমারের পরিস্থিতি কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘ফোর কাটস’ কৌশল ব্যবহার করছে। ১৯৭০ সালে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ফোর কাটস কৌশল প্রথম ব্যবহার করেন দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল নে উইন। এই কৌশল অনুসারে, বেসামরিক নাগরিকরা বাস করে এমন অঞ্চলগুলোতে হামলা চালিয়ে বিদ্রোহীদের খাদ্য, অর্থায়ন, নতুন সদস্য নিয়োগ দেয়া ও তথ্য সরবরাহ করা বন্ধ করে দেয়া হয়।

মিয়ানমারের স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সি বলেন, সেনাবাহিনী রাখাইনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে কয়েক বছর ধরে সদস্য হারিয়ে পরাজিত হতে চায় না। তারা আরসাকে সুস্থ্যভাবে অভিযান চালানোর সুযোগ না দেয়ার জন্যে পুরো গ্রাম ধ্বংস করে দিতে প্রস্তুত ছিল।

সুখুতারা তুলাতোলি গ্রামের বাসিন্দা ছিল। ৩০ আগস্ট সেনাবাহিনী ওই গ্রামে হামলা চালায়। এই হামলায় গ্রামের কমপক্ষে কয়েক শ’ মানুষকে হত্যা করে তারা। সুখুতারা তার বাবা-মা, দাদা-দাদি ও চার ভাইকে হারিয়েছে। তার চাচা জহুর আলমের সঙ্গে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

জহুর বলেন, আমাদের গ্রামে সেনাবাহিনীদের দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পালাতাম। তারা পুরুষদের হত্যা করেছে, নারীদের নির্যাতন করেছে, ছোট শিশুদের ডুবে মারার জন্যে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এই বিশাল সংখ্যার রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ দুর্দশায় পূর্ণ। তারা পাবে না শিক্ষা বা চাকরি। – তথ্যসূত্র : (ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ), এমজমিন
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে