শনিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৩:৩১

জামায়াত-জেএমবিতেই আইএসের বীজ

জামায়াত-জেএমবিতেই আইএসের বীজ

নিউজ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী নিজেদের পুনর্বাসন করতে এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে আরো উগ্রপন্থা বেছে নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষক আতিফ জালাল আহমাদ ও মাইকেল কুগেলম্যান তাঁদের এক যৌথ নিবন্ধে এমন শঙ্কার কথা জানান। 'আইসিস (জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া, যা সংক্ষেপে আইএস নামেও পরিচিত) কি বাংলাদেশকে সংক্রমিত করবে' শীর্ষক নিবন্ধে তাঁরা আরো বলেন, 'আইএসের সম্ভাব্য উত্থান ঠেকাতে চাইলে বাংলাদেশকে অবশ্যই হতাশ হয়ে পড়া জামায়াতের সদস্যদের ও জেএমবির (জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) অবশিষ্ট গ্রুপগুলোকে ব্যবহার করতে আইএসের যেকোনো চেষ্টার ব্যাপারে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে।' নিবন্ধে তাঁরা লিখেছেন, 'ইসলামী মৌলবাদ বাংলাদেশে কেবল জঙ্গি সহিংসতার মাধ্যমেই নয়, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেও প্রকাশিত। বাংলাদেশের জনগণ উগ্রবাদী ধারণাকে সমর্থন করে না। ধর্মীয় উগ্রবাদ ধারণ করার চেয়ে পেটে খাবার জোগানো নিয়েই তারা বেশি উদ্বিগ্ন। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, একদিন বাংলাদেশে আইএসের প্রভাব পড়বে- এমন অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আইএসে যোগ দেওয়ার খবরের পাশাপাশি এ দেশেও আইএসের সম্পৃক্ততার সন্দেহে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে বা আইএসের কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের কথা বলছে।' জামায়াত ও জেএমবির সঙ্গে আইএসের কিছু আদর্শিক মিল-অমিল তুলে ধরে ওই দুই গবেষক বলেন, আইএস বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা বা সদস্য নিয়োগের চেষ্টা করবে না- এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না; বরং তা হবে বিপজ্জনক। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই এখন বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি ও সমৃদ্ধির মাধ্যমেই উগ্রবাদের ঝুঁকি মোকাবিলা এ দেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত। নিবন্ধটি গত ৪ আগস্ট ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড্রো উইলসন সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্কলারসের (উইলসন সেন্টার) ওয়েবসাইটে ও সেন্টার ফর ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের (সাবেক নিক্সন সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডম) প্রকাশনা দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটির অন্যতম লেখক আতিফ জালাল আহমাদ বাংলাদেশে বড় হয়েছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশে দুর্নীতির উৎস বিষয়ে গবেষণা করেছেন। আরেক লেখক ও গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান উইলসন সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন। ওই নিবন্ধটি প্রকাশের পর আইএস গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও চলতি নভেম্বর মাসে বেশ কয়েকটি হামলা ও হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। নিবন্ধ প্রকাশের তিন মাসের মাথায় গত বুধবার মাইকেল কুগেলম্যান তাঁর এক টুইট বার্তায় বলেছেন, "'খাদের কিনারে বাংলাদেশ'- প্রতিবার এ শিরোনাম লেখার জন্য যদি আমি এক ডলার করে পেতাম, তবে আমি আগেভাগেই অবসর নিয়ে নিতাম। এটি (বাংলাদেশ) ইতিমধ্যে বিপজ্জনকভাবে খাদের কিনার ছাড়িয়ে গেছে।" অন্য লেখক আতিফ জালাল আহমাদও কুগেলম্যানের ওই লেখাটি টুইটারে শেয়ার করেছেন। গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, 'বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রমবিষয়ক উপস্থিতির চেয়ে আইএস ব্র্যান্ডের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করা উচিত। আইএস মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে ঢুকে গেছে, এখনই এমন ধারণা করা ভুল। এখানে যা হতে পারে তা হলো, আইএসের সমর্থন পায়নি কিন্তু তাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ উগ্রবাদী তরুণরা আইএসের নামে ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএসের আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা ছাড়াই ভয়ঙ্কর কিছু করার পরিকল্পনা করছে। এ ধরনের বিষয় পাকিস্তানে ও আরো বড় পরিসরে আফগানিস্তানে দেখা গেছে, যদিও আফগানিস্তানে সিরিয়া ও ইরাক ফেরত আইএস সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় জঙ্গিদের নিবিড় যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়।' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক লেখক তাঁদের লেখার শিরোনামে লেখেন, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। এটি এখন এখন আর সঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কিনার থেকে খাদে পড়ে গেছে।' তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশে চলমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটি বলছি না। বরং আমি বলছি, এসব ঘটনার পর সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে, যা উদাসীনতা ছাড়া আর কিছু নয়। কেবল বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে বাংলাদেশ সরকার বহু মতের এ দেশের মূলে বাসা বাঁধা উগ্রবাদী আদর্শের ক্রমবর্ধমান সমস্যার প্রতি উদাসীনতা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশকে নিজের সমস্যা বোঝার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দোষ না চাপানোর নীরব আহ্বান জানানো ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এখানে আর কিছুই করার নেই।' মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, 'এ আঘাত যদি অব্যাহত থাকে এবং কর্তৃপক্ষ যদি ভবিষ্যতেও নিজেকে নিষ্ক্রিয় রাখে, তাতেই ঝুঁকি রয়েছে। এটি জঙ্গিদের আরো শক্তিশালী করবে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কাছাকাছি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।' জামায়াত নিয়ে পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে গতকাল শুক্রবার আরেক দফা যোগাযোগ করা হলে গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, 'হ্যাঁ, আমি এখনো আমার পর্যবেক্ষণের বিষয়ে অনড় আছি। বাংলাদেশ সরকার আইএসের হুমকি মোকাবিলায় তেমন কিছু না করলেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শক্ত হাতে দমন অব্যাহত রেখেছে। আর এতেই জামায়াতের মতো গোষ্ঠীগুলোর উগ্রবাদে জড়ানোর ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে আমি নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি যে জামায়াতে ইসলামী বা অন্তত এর কিছু সদস্য আইএসের জালে ঢুকে গেছে।' গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে দুই লেখক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আইএসের বিস্তারের সম্ভাবনা কতটুকু তা পর্যালোচনা করেছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, বিশ্বে আইএসের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। দক্ষিণ এশিয়া হতে পারে ওই গোষ্ঠীর নতুন থাবা। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আইএসের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি), তেহরিক-ই-খিলাফত, ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান; আফগানিস্তানের খোরাসানের হিরোজ অব ইসলাম ব্রিগেড ও আল-তাওহীদ ব্রিগেড এবং ভারতের আনসার-আল-তাওহীদ অন্যতম। এক বছর আগে আইএস তার বৈশ্বিক উপস্থিতি জোরদারের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। আইএসপন্থী গোষ্ঠীগুলো পরবর্তী পাঁচ বছরে তাদের পরিকল্পিত খিলাফত সম্প্রসারণের মানচিত্রও প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাপী আইএসের বিস্তার নিয়ে শঙ্কার সময় বাংলাদেশ নিয়ে বাড়তি ঝুঁকির কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন গবেষক আতিফ জালাল আহমাদ ও মাইকেল কুগেলম্যান। এর একটি হলো, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেক ইউরোপীয় নাগরিকের আইএসে যোগদান এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। নিবন্ধে বলা হয়েছে, 'অব্যাহত রাজনৈতিক বিবাদ ও সমাজে কিছু কট্টর শক্তির উপস্থিতিতে দেশটি অশান্ত রয়েছে। এ কারণে এবং বিশেষ করে প্রতিবেশী আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আইএসের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি দেশটিকে কিছুটা ঝুঁকিতে ফেলেছে।' মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ কিভাবে এত দিন আইএসের নাগালের বাইরে থেকেছে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনার বক্তব্য নিয়েছেন তাঁরা। রাষ্ট্রদূত মজিনা বলেছেন, 'উদার, সহিষ্ণু, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জনগোষ্ঠী ও তৃতীয় বৃহত্তম মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশ, যা বিশ্বের একটি সংকটময় অঞ্চলে সহিংস উগ্রবাদের বিকল্প।' নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বৃহৎ মুসলমান জনগোষ্ঠীর বড় অংশই সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করে। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন নিয়েই বেশি চিন্তিত। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আইনের শাসন, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অন্যতম। এগুলো দেশের অর্থনীতির আধুনিকায়নকে দুর্বল করেছে। ভবিষ্যৎ নীতি কী হবে তা নিয়েও ঐকমত্য নেই। এর পরও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশ ও এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বে বিরল উদাহরণ। নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত মজিনা বাংলাদেশকে প্রগতিশীল ও সহিষ্ণু দেশ বললেও এ দেশে উগ্রবাদী সহিংসতার ইতিহাস আছে। জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেদিন দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলায় ৪৫৯টি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমান ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার হন এবং অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বিচারের পর ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলায় সারা দেশ কেঁপে ওঠার ঘটনা ঘটেনি। বর্তমান সরকার ইসলামের নামে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা উদ্যোগ স্বাক্ষর করে। গবেষক আতিফ জালাল আহমাদ ও মাইকেল কুগেলম্যান তাঁদের নিবন্ধে লিখেছেন, 'ইসলামী মৌলবাদ বাংলাদেশে কেবল জঙ্গি সহিংসতার মাধ্যমেই নয়, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেও প্রকাশিত। বাংলাদেশের সংসদে জোট গঠনে এ দলটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮টি, ১৯৯৬ সালে তিনটি, ২০০১ সালে ১৪টি এবং ২০০৮ সালে দুটি আসন পাওয়ার মধ্য দিয়ে দলটির কম হলেও নিবেদিত সমর্থক থাকার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।' তাঁরা লিখেছেন, জামায়াতের মূল লক্ষ্য দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তবে এই লক্ষ্য থাকার পরও জামায়াত বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গি নেতাদের সমর্থন পায়নি। এর অন্যতম কারণ হলো, জামায়াত শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মতো নারীদের নেতৃত্ব মেনে নিলেও জেএমবি নেয়নি। এর পরিবর্তে জেএমবি ধ্বংস ও সহিংসতার পথ বেছে নেয় এবং সৌভাগ্যজনকভাবে সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জেএমবি ও জামায়াত এখন আর তত ক্ষতিকর নয়। এদের বিপুলসংখ্যক ক্যাডার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারিয়েছে। জামায়াত-আইএস আদর্শিক মিল : নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুজন গবেষক তাঁদের নিবন্ধে জামায়াত-জেএমবি নিয়ে যে আশঙ্কার কথা বলেছেন, সে বিষয়ে তিনিও একমত। তিনি বলেন, আইএস, জামায়াত, জেএমবি বা যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের ভাবনা মূলত ওয়াহাবিতন্ত্রকে ঘিরে। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের (১৭০৩-১৭৯২) মাধ্যমে এর শুরু। পরবর্তী সময়ে এরই আলোকে ১৯২৫ সালে মিসরে হাসান আল বান্না মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ সালে আবুল আ'লা মওদুদীর মাধ্যমে এ অঞ্চলে জামায়াতের যাত্রা শুরু হয়। তিনি বলেন, শুধু জামায়াত নয়, যেসব গোষ্ঠী ইসলামী শাসন ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের মধ্যে আদর্শিক মিল আছে। তারা ছদ্মবেশ ধারণের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করে। তিনি বলেন, '১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত এ দেশে বিনা বাধায় বিস্তার লাভ করেছে। এখন তারা সংকটের মধ্যে পড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো তারা বিএনপির মতো একটি বড় দলকে আঁকড়ে ধরে আছে। জামায়াতের যে লক্ষ্য, তার প্রতি এ দেশের জনগণের বড় অংশের সমর্থন নেই। তাই তারা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারলেও সফল হবে বলে আমার মনে হয় না।' ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, 'জেএমবির উগ্রবাদ সম্পর্কে আমরা জানি। জামায়াতও যদি হতাশ হয়ে এমনটি বড় পরিসরে শুরু করে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। বাংলাদেশে কেউ যাতে আইএসের মিত্র হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য সরকারকে জঙ্গিবাদবিরোধী উদ্যোগ আরো জোরদার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেও যাতে কেউ আইএসের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মতাদর্শ প্রচার করতে না পারে, সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।' তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি যে গণতান্ত্রিক সুযোগ কমে এলেই উগ্রবাদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। সোমালিয়া, কেনিয়াতেও এমন উদাহরণ আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি একটি কারণ হতে পারে। তবে আইএস, আল-কায়েদা যাই বলি না কেন, প্রতিটি গোষ্ঠীর পেছনেই অর্থপ্রবাহ রয়েছে। বাংলাদেশেও এ বিষয়টি দেখা দরকার। কেননা ২০০০ সালে জাতিসংঘে গৃহীত সন্ত্রাসবিরোধী প্রস্তাবে বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের পেছনে আল হারমাইন ও আরেকটি সংস্থার নাম এসেছিল। বাংলাদেশে বর্তমান উগ্রবাদী ঘটনাগুলোর পেছনেও অর্থায়ন থাকতে পারে। তাই এ বিষয়ে আরো নজর দেওয়া প্রয়োজন।-কালের কন্ঠ ০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে