রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৬:৩৫

ভিডিও ফুটেজে সন্দেহজনক তিন মোটরসাইকেল

ভিডিও ফুটেজে সন্দেহজনক তিন মোটরসাইকেল

নিউজ ডেস্ক: আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলার সময় আক্রান্ত দুই সঙ্গীকে ফেলে অস্ত্র নিয়ে বনে পালিয়ে যাওয়া তিন কনস্টেবলকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এই নির্দেশের পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। শিল্প পুলিশ-১-এর উপপরিচালক কাওসার শিকদার কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বরখাস্ত হওয়া শিল্প পুলিশের ওই তিন কনস্টেবল হলেন পিনহারুজ্জামান, আপেল মাহমুদ ও এমরান আজিজ। সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁদের পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে তিন পুলিশকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে শিল্প পুলিশ-১-এর উপপরিচালক কাওসার শিকদার বলেন, সহকর্মী মুকুল হোসেন (নিহত) ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে (আহত) যখন দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে, তখন সেখানে দায়িত্বরত ওই তিন কনস্টেবল কোনো প্রতিরোধের চেষ্টা না করে হাতে থাকা রাইফেল নিয়ে ঘটনাস্থলের পেছনের গজারি বনের ভেতর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তিন পুলিশকে বরখাস্ত করা হলেও কনস্টেবল মুকুল হোসেনের হত্যাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের ধরতে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০-১২ গজ দূরে রাস্তায় পুলিশের স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ শেষে ওই ফুটেজে তিনটি কালো রঙের মোটরসাইকেল চিহ্নিত করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তিনটি মোটরসাইকেল ওই স্থান দিয়ে অতিক্রম করে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে চড়ে দুই ব্যক্তি হাত ইশারায় কী যেন বলার চেষ্টা করছে। আবার আরেকটি মোটরসাইকেলে দুজনের মধ্যে পেছনে বসা এক ব্যক্তি বারবার পেছনের দিকে তাকাচ্ছিল। আরো একটি মোটরসাইকেলেও দুজনের গতিবিধি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থার ধারণা, ওই তিনটি মোটরসাইকেলের যেকোনো একটিতে ঘাতক ছিল। গতকালও পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, 'ঘটনাস্থলের কিছু দূরে পুলিশের বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরায় সেদিনের কিছু দৃশ্য ধরা পড়েছে। ক্যামেরাগুলো থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই ঘটনার পরপর মহাসড়ক দিয়ে যে কয়টি মোটরসাইকেল গিয়েছিল তা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময় অন্যান্য যেসব যানবাহন রাস্তা অতিক্রম করেছিল তাও ফুটেজে এসেছে। আশা করি, ওই ফুটেজ থেকেই কিলারদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি যোগ করেন, 'দেশবিরোধী চক্র পুলিশ কনস্টেবল মুকুলকে হত্যা করে, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।' ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী সংস্থা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে, ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়া ২৩টি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি দ্রুতগতিতে স্থান ত্যাগ করছিল। আর ওই মোটরসাইকেলের আরোহী ২২-২৫ বছর বয়সী দুই ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, 'সিসি ক্যামেরাই এখন আমাদের মূল ভরসা। ফুটেজে থাকা একটি মোটরসাইকেলে দেখা গেছে, পেছনে বসা যে ব্যক্তি বারবার পেছনের দিকে তাকাচ্ছে, তার পিঠে একটি ব্যাগ দেখা গেছে। তিনটি মোটরসাইকেলেরই নাম্বার প্লেট কিছুটা অস্পষ্ট, তবে বোঝা যাচ্ছে। একটি মোটরসাইকেলের নাম্বারের আগে লেখা আছে ঢাকা মেট্রো। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।' এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'কিলার শনাক্তের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকারীদের ধরা সম্ভব হবে। ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে থাকা অস্ত্রে আসলে গুলি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' আমাদের সাভার প্রতিনিধি তায়েফুর রহমান জানান, আহত পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) আনোয়ারুল কাদের নাজিম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, 'এখনো ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।' আলোচিত এ হত্যা মামলা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। ঘটনার পরপরই অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তে সাত সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুর রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি আশরাফুল আজিম ও শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইদুর রহমান। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ওসি মোহসিন কাদির বলেন, তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তিন জেলার সমন্বয়ে গঠিত গোয়েন্দা দলের পাশাপাশি পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।-কালের কণ্ঠ ০৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে