রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:০৩:৩৬

কেন্দ্রের নির্দেশনা নেই তবে প্রস্তুত তৃণমূল

কেন্দ্রের নির্দেশনা নেই তবে প্রস্তুত তৃণমূল

নিউজ ডেস্ক: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে- কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে থেমে নেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। এর মধ্যেই দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না।' তৃণমূলের নেতারা বলছেন, প্রথমে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে, পরে মামলা দেওয়া হয়েছে। এরপর সঙ্গী হয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপন আর ফেরারি জীবন। অধিকাংশ তৃণমূল নেতার একই অবস্থা। এর পরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, 'হারি-জিতি। মাঠ ছাড়ব না।' তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের মনোভাবে এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত তৃণমূলে কোনো নির্দেশনাও যায়নি। তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও স্বীকার করেছেন- 'কোনো সিদ্ধান্ত নেই।' তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, 'সরকার দলীয়ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই কাজ করছি। খুব একটা সমস্যা হবে না।' তবে ভিন্নমত পোষণ করে আরেকজন বলছেন, 'নির্বাচনে গিয়ে লাভ কী। জয়ী হলেও বরখাস্ত তো নিশ্চিত।' যদিও নির্বাচন ঘিরে বিএনপির তৃণমূলের অনেকেই আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসছেন। স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কি না? তাঁরা সবাই স্বীকার করেছেন- এখনো কোনো নির্দেশনা নেই। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান অধিকাংশ তৃণমূল নেতা। সরকার দলীয়ভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে কাজ চলছে গোপনে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা জানান, গেল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশ নিয়েছিল। সে তালিকা সাংগঠনিক বিভাগ অনুযায়ী নেতাদের কাছে রয়েছে। ওই তালিকা ধরেই এবার প্রার্থীদের মনোনয়ন নির্ধারণ করা হবে। মামলার কারণে নির্বাচনের অনুপযুক্ত, যেসব নেতার মৃত্যু হয়েছে, জনপ্রিয়তা কমে গেছে, দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ইত্যাদি কারণ বিচার-বিশ্লেষণ করে ওই তালিকা থেকে প্রার্থী বাদ দেওয়া হবে। সেখানে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ছাড়া জামায়াতসহ জোটের যে দলগুলো নির্বাচন করতে পারছে না, সেখানে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণের কাজও চলছে। আবার কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হন সে বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের মৌখিক নির্দেশে নেতারা প্রাথমিকভাবে কাজটি সেরে রাখছেন। নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের প্রস্তুতি কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, 'কেন্দ্র থেকে আগেরবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এবার সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। তবে আমরা বসে নেই, কাজ করছি। তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেওয়া উচিত। কারণ, নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল পর্যায়েও সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে।' বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত- জানিয়ে তিনি আরো বলেন, 'গেল স্থানীয় নির্বাচনে কারা কারা নির্বাচন করেছেন সে তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। ওই তালিকা বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে, প্রয়োজনে নতুন তালিকা করা হবে।' খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। তিনি বলছেন, 'আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বিএনপি। তাই বিএনপিকে নাজেহাল করতে যা যা করার দরকার তারা তা-ই করবে। যখনই বিএনপির পুনর্গঠন শুরু হলো তখনই সরকার ধরপাকড় শুরু করল। উদ্দেশ্য, পুনর্গঠিত বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে।' নির্বাচনে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাচন হলে ৯৯ শতাংশ জায়গায় বিএনপির প্রার্থীরা হারবেন।' কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই দলের প্রার্থীরাই পোস্টার ছাপাবেন। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পোস্টারে শেখ মুজিব-হাসিনার ছবি থাকবে। এখন বিএনপির প্রার্থীকে শায়েস্তা করতে আওয়ামী লীগের লোকজনই তাদের পোস্টারে আগুন লাগাবে, ছিঁড়ে ফেলবে। আর থানায় গিয়ে নালিশ করবে, জাতির জনকের ছবিতে আগুন দিয়েছে বিএনপির প্রার্থী। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে, বিএনপির প্রার্থীর ওপর হামলা হবে।' তুরুপের তাস হিসেবে সরকার জামায়াতকে ব্যবহার করছে মন্তব্য করে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, আজ বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে কালই আওয়ামী লীগ তাদের দলে নিয়ে নেবে। একই প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, 'প্রস্তুতি নেব কোথা থেকে? যারাই আগ্রহ প্রকাশ করছে তাদের নামেই বেছে বেছে মামলা দিচ্ছে। এর পরও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পর তা প্রকাশ্য রূপ পাবে।' নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূলের চাপ আছে কি না জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তো জনপ্রতিনিধি হতে চাইবেই। সে জন্য এই চাপ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। কিন্তু নির্বাচনকে সরকার এমনই প্রহসনে পরিণত করেছে যাতে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে না পারে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, 'আত্মগোপনে থেকেও নির্বাচন করা যায়। আগের নির্বাচনগুলোতে আমাদের অনেক প্রার্থী প্রচার চালাতে পারেননি মামলা-হামলার ভয়ে। তাঁদের পক্ষে তো নেতাকর্মীরা কাজ করেছেন। অনেকেই জয়ী হয়েছেন। কিন্তু লাভ কী? পাঁচটি সিটি করপোরেশনে জনগণের ভোটে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে বরিশাল ছাড়া সব মেয়রকেই বরখাস্ত করা হয়েছে সরকারের হীনম্মন্যতার কারণে।' ইতিবাচক ইঙ্গিত মওদুদের : নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না বিএনপি। সম্ভবত তারা (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে দলের চয়ারপারসন দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সকালে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ এসব কথা বলেন। মওদুদ আহমদ বলেন, 'পৌরসভা নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া শিগগির দেশে ফিরবেন। তারপর দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। আশা করি একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত হবে। খুব সম্ভব আমরা নির্বাচনে যাব।' লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া কবে ফিরবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, 'চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি আমাদের মাঝে ফিরবেন।' মওদুদ বলেন, 'দেশে এখন রাজনীতি নেই, গণতন্ত্র নেই। যেটুকু আছে, তাও নিয়ন্ত্রিত। গত চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছি। এরপর ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং সরকারের ব্যবহার দেখেছি। সে ব্যবহার অব্যাহত থাকলে তা আমাদের প্রতিহত করতে হবে।' খালেদা জিয়ার দেওয়া জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে মওদুদ আহমদ বলেন, 'কে কী বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন জোরদার করতে।-কালের কণ্ঠ ০৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে