রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৫২:৪৩

ফাঁসির প্রত্যাশায় আদালতে এসেছে রাজনের পুরো গ্রাম

ফাঁসির প্রত্যাশায় আদালতে এসেছে রাজনের পুরো গ্রাম

সিলেট: সিলেটের জজকোর্টে আজ রাজন হত্যার রায় দেয়া হবে। এর রায় উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই দল দলে আসতে শুরু করেছে রাজনের গ্রামসহ আশেপাশের শত শত মানুষ। উৎসুক মানুষের চোখ খুঁজে ফিরছে বিচারক আর আসামিদের পথপানে। হবেই বা না কেন? যে বর্বরতা কোটি মানুষের চোখের জলে উষ্ণ করেছে এই বাংলার মাটিকে, তা থেকে হয়তো পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যাবে না। তবু কিছুটা হলেও দায়মুক্তি চান তারা। সকাল ১০টা ২২মিনিটে রাজনের মা, বাবা ও তার ছোট ভাই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন। রাজনের মা বললেন, ‘ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি।’ এসময় উপস্থিত সবাই ফাঁসি ফাঁসি বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। আদালতের রাজন হত্যা মামলার সব নথিপত্র প্রস্তুত করতে পেশকারদের ব্যস্ত দেখা গেছে। যেন বিচারক আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিচার কার্য শুরু করা যায়। এদিকে আসামিদের আদালতে হাজির করাতেও সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিলেট জজ কোর্টের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই আসামিদের আদালতে হাজির করানো হবে। প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে চোর সাজিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এরপর ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযুক্তরা হচ্ছেন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, তার মেজো ভাই মুহিদ আলম (৩২), বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), ছোটভাই পলাতক শামীম আহমদ (২০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মো. জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮), জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার (৪৫), পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০), শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০), সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলী (৪৫), শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ী) মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেল (২৫)। হত্যার পর লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগে মুহিদ আলম, ময়না চৌকিদার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ আনা হয়। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর ৪,৭,৮,১১,১২,১৩,১৪,১৫ ও ১৮ অক্টোবর চলে সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। মামলার মোট সাক্ষী ৩৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় আদালতে। এদিকে রাজন হত্যাকাণ্ডের পর মুহিদ আলমের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুছকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। চার্জশিট আমলে নেয়ার পর, ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ। গত ৩১ আগস্ট রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পলাতক কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদিতে পলাতক কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আর বহুল আলোচিত নিমর্ম এ হত্যাকাণ্ডের রায় হতে যাচ্ছে আজ রোববার। ৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে