রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:১৮:৫৩

২৬ বছরের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি, দায় নিবে কে?

২৬ বছরের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি, দায় নিবে কে?

ঢাকা : রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের প্রধান দায়িত্ব দিয়ে গঠন করা হয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এ জন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটি অর্থাৎ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় রাজধানী জুড়ে। সংস্থাটি দায়িত্ব পালনে এতটাই ব্যর্থ হয়েছে যে সামান্য বৃষ্টি হলেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহেও দৃশ্যমান সফলতা নেই। মূলত কাজের ব্যাপকতা ও অলাভজনক হওয়ায় এই দায়িত্বকে অনেক সময় বোঝা হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা। এমনকি ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে দায়িত্বই ছেড়ে দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। তারা পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চায় ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের কাছে। এজন্য মন্ত্রণালয় বরাবর পত্রও লেখা হয়েছে। তবে ঢাকা ওয়াসার এই ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, ড্রেনেজ লাইন সিটি করপোরেসনের কাছে হস্তান্তর করা হলে ওয়াসার এতো দিনের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি ঢাকা পড়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের উচিৎ নিজের দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপানোর অপচেষ্টার জন্য জন্য ওয়াসা এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র দিয়েছেন। প্রথম দফায় গত বছরের ৪ আগস্ট পত্র লেখা হলে কোনো সাড়া পাননি তিনি। সম্প্রতি আবারো মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পত্র দেয়া হয়। এতে তিনি জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেন। চিঠিতে বলা হয়েছে- ঢাকা ওয়াসা ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনকে এক বছরের প্রয়োজনীয় জনবল ও ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ দেয়া হবে। এর পরের বছর থেকে করপোরেশন তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিচালনা করবে। মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে থেকে ওই চিঠির বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশন থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সংস্থার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্মকর্তাদের থেকে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে ভালোমন্দ বিবেচনা করে একটি মতামত দেয়ার জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এদিকে ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের কাছে হাস্তান্তরের কথা বলা হলেও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের অন্যতম মাধ্যম খালগুলোর মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি ওয়াসা এমডির চিঠিতে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, খালগুলো হস্তান্তর না করে শুধু ড্রেন হস্তান্তর করা হলে বর্ষা মওসুমে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওয়াসার এসব ড্রেনেজ ব্যবস্থা সরাসরি খালের সঙ্গে জড়িত। ড্রেনেজ ব্যবস্থা যতই ভালো হোক না কেন খলগুলো দখলমুক্ত করা না হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। নগরীতে ওয়াসার মালিকানাধীন ৪৩টি খাল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৬টি খালের অস্তিত্ব একন খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকি যে কয়টি খাল দেখা যায় এগুলোর যতটুকু প্রশস্ত থাকার কথা তা নেই। ওয়াসার কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে প্রভাবশালীরা কোথাও ড্রেন, কোথাও ছোট কালভার্ট আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে দখল করে তৈরি করা হয়েছে বড়বড় ইমারত। ওয়াসা এমডির ওই চিঠিতে আরো বলা হয়েছে- ১৯৮৯ সালের এক আদেশের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের পাইপলাইন ঢাকা ওয়সার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে সংস্থা দুটির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ ডিসিসি অযৌক্তিকভাবে এ জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দোষারোপ করে। ফলে বিভিন্ন সময় কথা উঠেছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা যেকোনো একটি সংস্থার কাছে থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই ‘স্টোর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ’ ব্যবস্থা ডিসিসির নিকট হস্তান্তরের ব্যাপারে একমত পোষণ করা যায়। জনস্বার্থে বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিৎ বলে ঢাকা ওয়াসা মনে করে। তাকসিম এ খানের চিঠিতে আরো বলেছেন, ঢাকা ওয়াসা ড্রেনেজ সার্কেলের আওতাভুক্ত সকল কাজ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে প্রস্তুত আছে। এরই আলোকে প্রয়োজনে ঢাকা ওয়াসা ‘ইকুইপমেন্ট’ এবং ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ এর পাশাপাশি বিদ্যমান জনবল এক বছরের জন্য লিয়নে প্রেরণ করবে। তাই ঢাকা মহানগরীর জলজট যাতে স্থায়ীভাবে দূর হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একক সংস্থা ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণের নিকট হস্তান্তরের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ প্রদানের অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা হস্তান্তরের জন্য ঢাকা ওয়াসা সিটি করপোরেশনের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় একটি কমিটি গঠন করে কমিটিকে এর ভালো মন্দের বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মতামত ইতিবাচক হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে মন্ত্রণালয়।’ এদিকে রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। ২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্প দুটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু প্রকল্প দুটির কোনো সুবিধা পায়নি নগরবাসী। মূলত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় ঢাকা ওয়াসাকে। অন্যদিকে বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য স্থায়ী পাম্পিং স্টেশনকে গুরুত্ব দিলেও এর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঢাকা ওয়াসার রয়েছে ড্রেনেজ সার্কেল নামে একটি পৃথক শাখা। ৩শ জনবল সম্পন্ন এ বিভাগটিকে কাজে লাগানো হয় না। অথচ দায়িত্ব অনুযায়ী এ বিভাগটিই ওয়াসার জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ।-বাংলামেইল ৮ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে