সোমবার, ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৭:৪৭

যুদ্ধাপরাধের বিচারে সমর্থন দিলে সংলাপ

যুদ্ধাপরাধের বিচারে সমর্থন দিলে সংলাপ

নিউজ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন দিলে তাঁর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারপ্রধান বলেন, এ দেশে আইএসের অস্তিত্ব আছে এমন স্বীকারোক্তি আদায় করতে আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'বলা হচ্ছে অনিরাপদ বাংলাদেশ। আপনারা জানেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ঘটনা ঘটছে। এখন বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে এসব বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে আইএস আছে, এটা যদি স্বীকার করানো যায় তবে যেকোনো সময় হামলে পড়তে পারবে। সে ধরনের পরিকল্পনা কিন্তু অনেকেরই আছে।' অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের অর্থায়ন ও তাদের নির্দেশনা বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে কিছুদিন ইন্টারনেটে যোগাযোগের কিছু অ্যাপস বন্ধ রাখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেদারল্যান্ডস সফরের অর্জন সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'উনি সংলাপে বসার যোগ্যতা তখনই অর্জন করবেন যখন বলবেন, হ্যাঁ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। কারণ এ যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। এ যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশে অগ্নিসংযোগ করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। এ দেশ স্বাধীন হোক তা চায়নি। এরা স্বাধীনতার শত্রু। এদের বিচার হওয়া উচিত। যে দিন উনি বলবেন যে হ্যাঁ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক বাংলাদেশে, এটা আমরা সমর্থন করি এবং বিচার যেটা হচ্ছে সেটা সঠিক হচ্ছে, তখন ভেবে দেখা যাবে। দয়া করে তার আগে আমাকে ওই খুনির সঙ্গে বসতে অনুরোধ করবেন না, কারণ বসলেই পোড়া মানুষের গন্ধ পাব।' দশম সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া সংলাপে না বসায় এর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন জাতির প্রয়োজন ছিল তখন তাঁর কাছ থেকে সাড়া এলো না। আর এখন উনি ডাকলেন? এমন কোনো রাজনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ পড়ে নাই বা এত রাজনৈতিক দৈন্যতায়ও পড়ে নাই যে একটা খুনির সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে। যে মানুষ পুড়িয়ে মারে তার সঙ্গে বসতে হবে।' যার হাতে মানুষ পোড়ার গন্ধ তার সঙ্গে বসার ইচ্ছা নেই : সংলাপ সমর্থনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যাদের এখনো তাঁর প্রতি এত দরদ তাদের বলব, যে মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাদের ফেরত দেওয়া হোক। যারা হাসপাতালে পঙ্গু তাদের সুস্থ করে দিক। তারপর ভেবে দেখব। যার হাতে মানুষ পোড়ার গন্ধ তাঁর সঙ্গে বসার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।' তার মানে এতে ওনার হাত আছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই যে মানুষ হত্যা করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করে উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, জাতীয় সংলাপ আহ্বান করা হলে এটি বন্ধ করা হবে- তার মানে এতে ওনার হাত আছে। অথবা উনি ও ওনার গুণধর পুত্র বিদেশে বসে এগুলো করাচ্ছেন।' আইএস আছে- এ ধরনের স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে দেশের অবস্থা কী হবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একসময় এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। আমরা সেটাকে দমন করেছি। সেখানে জনগণের সমর্থন আমরা পেয়েছি। এখন আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশে আইএস আছে বা জঙ্গি আছে- এ ধরনের একটি স্বীকৃতি আদায় করতে পারে তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা কী হবে সেটা কি আমাদের দেশের মানুষ একবার ভেবে দেখবে? সিরিয়ায় কী হচ্ছে? ইজিপ্টে (মিসর) কী হয়েছে? ইরাকে কী হয়েছে? আফগানিস্তানের কথা চিন্তা করেন, পাকিস্তানের কথা চিন্তা করেন, সেখানে কী ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে সে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার একটি চক্রান্ত আন্তর্জাতিকভাবে যেমন আছে, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ব্যাপারে আমরা জাতি হিসেবে যদি সচেতনতা না আনি তবে আমাদের সর্বনাশ হবে। ওই ইরাক, আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি এ দেশে সৃষ্টি হোক, সিরিয়া বা লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক সেটা আমাদের কাছে কাম্য নয়।' মুসলমানরা মুসলমানদের মারছে, কিন্তু খেলছেটা কে, সুতাটা কার হাতে : শেখ হাসিনা বলেন, 'মুসলমান হয়ে মুসলমানদের মারছে, শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহর উপর কি ভরসা নাই? আজকে জুমার নামাজের সময় বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। মুসলমানরা মুসলমানদের মারছে। কিন্তু খেলছেটা কে? সুতাটা কার হাতে? তাদের ক্রীড়নক কেন হচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে যে আমরা চাই না এ দেশের ভূখণ্ডকে কেউ ব্যবহার করুক বা এ দেশের ওপর কেউ হামলে পড়ুক।' প্রচণ্ড চাপ, কেন স্বীকার করিনি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা জানেন, প্রচণ্ড চাপ যে আমরা কেন স্বীকার করিনি। আমার অবস্থান স্পষ্ট। আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব কারা করছে। আমাদের যে সমাজ তাতে সবাই তো চেনা। কাজেই যেই করছে, যেই ধরা পড়ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা একটি বিশেষ দলের সদস্য। ছাত্রজীবনে হয় শিবির করেছে, না হয় বিএনপি করেছে। তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর বাইরে তো আমরা কাউকে দেখছি না। এটা তো একটা পরিকল্পনা যে আগুন দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে তো কিছু করা গেল না, এখন গুপ্তহত্যা করতে হবে। আর সেই গুপ্তহত্যা, বিদেশিদের হত্যা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হবে। আমি গণমাধ্যমকে বলব, আপনারা এসবের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করুন। আর দেশবাসীকেও বলব, আপনারা সচেতন হোন।' শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশবাসীকে বলব, যারা এ দেশকে অনিরাপদ, জঙ্গি বা সন্ত্রাস আছে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে, এগুলো তো আর্টিফিশিয়ালি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ তো এ রকম না। আমাদের মধ্যে সব সময় একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে।' ভাইবারসহ অনেক অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিরা কার্যকলাপ চালাচ্ছে : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অবশ্যই এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে কারা অর্থায়ন করছে। সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। অর্থায়ন মূলত একটা দল করছে আর মাঠে খুনখারাবি আরেকটা দল করছে। এটা একেবারে স্পষ্ট এবং এর বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা আরো তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছি। ডিজিটালের সুবিধা যেমন রয়েছে কুফলও কিছু রয়েছে। এত বেশি আমরা দিয়েছি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে গেছি যে সেখানে ভাইবারসহ আরো অনেক অ্যাপ ব্যবহার করে এ জঙ্গিরা তাদের কার্যকলাপ চালাচ্ছে। সেটা নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। কিছুদিন দেখব, যদি খুব বেশি ইয়ে করে তবে কিছু সময়ের জন্য, কিছুদিনের জন্য সেই অ্যাপগুলো বন্ধ করে দিয়ে আমরা তাদের লিংকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। চেষ্টা করব তাদের ধরতে, যাতে এই অর্থায়নটা আর নির্দেশনাটা না করতে পারে।' লেখালেখিতে সতর্ক হতে পরামর্শ : লেখক-প্রকাশক-ব্লগারদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এখানে পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে সরকার যেখানে যতটুকু নিরাপত্তা নেওয়া দরকার তা নিচ্ছে। যখনই কোনো ঘটনা ঘটছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সাম্প্রতিক ঘটনার পর কম্বিং অপারেশন শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন আমরা কিন্তু তা নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি চাইব জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হোক।' সরকারপ্রধান বলেন, 'লেখালেখির বিষয়ে আমি বলব, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। আমাদের সংবিধানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। আমি একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। এখন কেউ যদি আমার ধর্ম নিয়ে কোনো বিকৃত লেখা লেখে, যদি কেউ নোংরামি করে, নোংরা লেখা লেখে সেটা আমার কাছে আঘাত লাগবে। অন্য ধর্ম নিয়ে লিখলেও তাদের আঘাত লাগবে। কাজেই লেখালেখির বিষয়ে সতর্কতা- এটা আর কিছুই না, এটা হলো কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যেন কোনো লেখা প্রকাশ করা না হয়। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে- এ ধরনের কোনো কথা যেন না বলা হয়। আমি যদি সত্যিকারের সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করি তাহলে আমি যেমন আমার নিজের ধর্মকে সম্মান করব, তেমনি অন্য ধর্মকেও সম্মান করব। কেউ যদি এথিস্ট হয় সেটা অন্য কথা। সে তার বিশ্বাস নিয়ে থাকবে। কিন্তু অন্য ধর্মের কাউকে আঘাত দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে মানবিক গুণ। কিন্তু বিকৃত করে লেখা- সেটা মানবিক গুণ নয়। যেটা বিকৃত সেটা বন্ধ করতে হবে। লিখতে কাউকে নিষেধ করা হয় নাই। লেখালেখি কাউকে বন্ধ করতে বলা হয় নাই। লেখালেখিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। একটাই বলা হয়েছে, কারো অনুভূতিতে যেন আঘাত না আসে।' এমন বক্তব্য খুনিদের উৎসাহিত করবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হত্যাকারীরা মোটেই উৎসাহিত হবে না। হত্যাকারীকে আমরা হত্যাকারী হিসেবেই দেখছি। যারা খুন করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।' স্থানীয় নেতারা নিজের দল ভারী করতে জামায়াতের নেতাকর্মী টানছেন : আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের গ্রুপিংয়ে দল ভারী করতে জামায়াতের নেতাকর্মীদের দলে টানছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে অনেক সময়ে জামায়াত ঢুকে যায়। ঢুকেই তারা খুনখারাবি করে। খবর হয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলের নেতারা অনেকে নিজের দল ভারী করার জন্য তাদের দলে নেয়। কিন্তু আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের যথেষ্ট লোকবল রয়েছে। এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি যে জামায়াত-বিএনপি থেকে লোক নিতে হবে। আমি দলের নেতাকর্মীদের বলব, কোনো জায়গাতেই যেন তাদের দলে গ্রহণ না করা হয়।' অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে : মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বলছে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং এ বিষয়ে আরো প্রতিক্রিয়া জানাব।' বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নিশ্চয়ই কোনো জায়গা থেকে মোটা অঙ্কের কিছু পেয়েছে, যার কারণে এ ধরনের বিবৃতি দিয়েছে।-কালের কণ্ঠ ০৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে