সোমবার, ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৯:৪১

বিএনপি-জামায়াতের ২২১ জনসহ আটক ৬৬০

বিএনপি-জামায়াতের ২২১ জনসহ আটক ৬৬০

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাটসহ ১৫ জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত ২২১ নেতাকর্মীসহ ৬৬০ জনকে আটক করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে কমপক্ষে বিএনপির ৩৯ ও জামায়াতের ১৮২ জন রয়েছে। রাজশাহীর মোহনপুরে দুটি পিস্তল ও ৫৭টি গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিবিরের এক কর্মীকে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মীসহ আট শর বেশি আটক করা হয়। তাদের বেশির ভাগকেই নাশকতার মামলায় আটক করা হয়। এ ছাড়া আটককৃতদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিও রয়েছে। ব্যাপক হারে ধরপাকড়ের বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, 'বিএনপি-জামায়াত-শিবির বলে কোনো কথা নয়, রুটিনমাফিক সারা দেশে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা আমাদের রুটিনমাফিক কার্যক্রম। গণগ্রেপ্তার নয়। আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্য মোতাবেক এ অভিযান চলছে। অপরাধী হিসেবে তথ্য পাওয়ার কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।' দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) ১৫তম গণপ্রকৌশল দিবস ও ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্লগার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এ পর্যন্ত যে কজন ব্লগার খুন হয়েছে তার মধ্যে দুটি হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে। আরো দুজন ব্লগার হত্যার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম জেলা ও নগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ১০৭ জনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা, পরোয়ানা ও নাশকতার অভিযোগ আছে। গত শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে ৯০ জন এবং রবিবার সকালে বাকলিয়া থানায় বিশেষ অভিযানে ১৭ জনকে আটক করা হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. নাঈমুল হাছান বলেন, 'জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ও নিয়মিত মামলা রয়েছে।' নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মঈন উদ্দিন বলেন, সকাল ১০টায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন হিসেবে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত ৪৮১ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন জামায়াত-শিবিরের এবং একজন বিএনপির কর্মী-সমর্থক রয়েছে। খুলনা : খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১৯ নেতাকর্মীসহ ৬৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা জেলা পুলিশের ওসি (পর্যবেক্ষণ) আব্দুর রশীদ জানান, ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মাগুরাঘোনা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শহিদুল ইসলামসহ জামায়াত-শিবিরের ১৮ জন এবং রূপসার দেবীপুর থেকে বিএনপিকর্মী কবীর শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার ৯ থানা এলাকা থেকে এই ১৯ জনসহ মোট ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহী : রাজশাহীতে নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মোহনপুরে শিবিরকর্মী শরীফ রেজাকে (২০) দুটি পিস্তল ও ৫৭টি গুলিসহ আটক করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফ কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চারঘাটে নাশকতার মামলার আসামি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সালামও রয়েছেন। এ ছাড়া জেলার গোদাগাড়ীতে একজন, চারঘাটে আরো একজন, পুঠিয়ায় একজন এবং বাঘায় দুজন রয়েছে। বরিশাল : পুলিশের অভিযানে বিএনপি ও জামায়াতের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির বজলুর রহমান বাচ্চু, আইনবিষয়ক সম্পাদক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাউদ্দিন মাসুম, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহম্মেদ ও বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আউয়াল হোসেন। কোতোয়ালি মডেল থানার সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আনসার উদ্দিন ও ওসি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই চারজনের বিরুদ্ধে নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে। ময়মনসিংহ : পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১৬৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিএনপির ১৪ নেতাকর্মী, জামায়াত-শিবিরের সাতজন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য আছে। আটককৃতরা বিভিন্ন মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ময়মনসিংহ (দক্ষিণ) জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাসুদ, জেএমবির সদস্য মুক্তাগাছার মোস্তফা ও সদর উপজেলার সুলতান, ফুলবাড়িয়া পৌর জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল হামিদ, ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের নেতা আবুল কাশেম ও উপজেলার মল্লিকবাড়ী ওয়ার্ড বিএনপির নেতা হেলাল উদ্দিন, গফরগাঁও জামায়াতের রোকন নাসির উদ্দিন প্রমুখ। ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল কাদের জানান, একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাশেম ও হেলালকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। জয়পুরহাট : পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীসহ মোট ৯২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়র রহমানকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে একটি বাস পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জয়পুরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন জানান, শনিবার রাতভর বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জামায়াতের ১২ জন, শিবিরের ৯ জন, বিএনপির দুজন, মাদকসংক্রান্ত মামলায় আটজন এবং বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ৬১ জনসহ মোট ৯২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৭ জন জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক, বিএনপির একজন এবং ১২ জন বিভিন্ন মামলার আসামি আছেন। গত দুই দিনে জেলার ১২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে জামায়াত-শিবিরের ৫৩ জনসহ মোট ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পিরোজপুর : জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ১৮ নেতাকর্মীসহ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৯ জন করে নেতাকর্মী রয়েছে। ফেনী : জেলার ছয়টি উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াতের ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, অফিস সম্পাদক শফিকুর রহমান, সহ-অর্থ সম্পাদক মাকছুদুর রহমান, দাগনভূঞা পৌর জামায়াতের আমির গাজী সালাহ উদ্দিন ও ছাগলনাইয়া পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি কবির আহাম্মদ ও সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান। জেলার পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নাশকতার আশঙ্কায় জামায়াতের এই নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। মেহেরপুর : গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলার আসামি ১৪ জামায়াত কর্মী-সমর্থককে আটক করেছে। গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, আটক সবাই নাশকতার মামলার আসামি। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাট : জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন জামায়াত-শিবির ও সাতজন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় আরো ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। ঝিনাইদহ : সদর ও কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের অভিযানে জামায়াত-শিবিরের ৯ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হামদহ, কামারকুণ্ডু, শিকারপুর থেকে তিন জামায়াতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জামায়তকর্মী ও বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গাইবান্ধা : সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে পৌর বিএনপির সভাপতি মো. মশিউর রহমান সবুজ (৪৭) ও জামায়াত নেতা কফিল উদ্দীনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী সহিংসতা ও নাশকতার এবং কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ভাঙচুরের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নাশকতা, ডাকাতি, হত্যা ও সন্ত্রাসের অভিযোগে করা মামলার ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ : পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুই বিএনপি নেতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের সন্দেহভাজনদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা দুই বিএনপি নেতা হলেন মোহাম্মদ হোসেন কাজল ও ফারুক হোসেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক নাছিরউদ্দিন জানান, জেলায় শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমির মঈনুদ্দিন আহমাদ। শেরপুর : ঝিনাইগাতী উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।-কালের কণ্ঠ ০৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে