সোমবার, ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৭:০২

সেই গাড়িতে চড়েই ফিরলেন বাড়ি

সেই গাড়িতে চড়েই ফিরলেন বাড়ি

নিউজ ডেস্ক: অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন দেশজুড়ে বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। চলতি সংসদ অধিবেশন চলাকালীন এ জামিন বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভকে (৯) গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গত ১৫ অক্টোবর থেকে সাংসদ লিটন কারাগারে ছিলেন। এদিকে জামিন পাওয়ার পর তিনি যে গাড়ি থেকে শিশু সৌরভকে গুলি ছুড়েছিলেন সেই গাড়িতে চড়েই কারাগার থেকে বাড়ি ফিরেছেন। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ও সমর্থকদের মোটরসাইকেল বহর তাকে অনুসরণ করে। গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোববার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে পূর্বনির্ধারিত দিনে জামিন শুনানি শুরু হয়। সোয়া ১১টায় শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল হাসান ইউসুফ অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেন। এ সময় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। সাংসদ লিটনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যাচেষ্টা ও বাড়ি ভাংচুরের দুটি মামলায় একই আদালতে গত বুধবার জামিনের আবেদন করা হয়। ওইদিন হাফিজার রহমানের বাড়ি ভাংচুরের মামলায় জামিন মঞ্জুর করলেও বিচারক সৌরভ হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার ওই আদালতেই চতুর্থ দফায় জামিনের আবেদন করেন লিটনের আইনজীবী মো. সিরাজুল ইসলাম বাবু। পরে বিচারক রোববার জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন। আমলি আদালতের কর্মকর্তা আবদুল মজিদ জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শিশু হত্যাচেষ্টা মামলায় বিচারক অতিরিক্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাংসদ লিটনকে ১০০ টাকার বন্ডে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন। সাংসদ লিটনের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে গতকাল গাইবান্ধা আদালত চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে আদালত চত্বর এবং প্রাঙ্গণে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। লিটনের সমর্থক দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন রায় ঘোষণার পর উল্লাস করেন। পরে তার সমর্থকরা দ্রুত শহরতলির ঝিনেশ্বর এলাকায় কারাগার প্রাঙ্গণে ছুটে যান। তখন লিটনের কয়েকজন আইনজীবী আদালতের আদেশের কাগজপত্র নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের অফিসে প্রবেশ করেন। দুপুর ১২টার পর লাল রঙের ওই পাজেরো জিপে চড়ে লিটনের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও আত্মীয়-স্বজন কারাগার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। এর পরপরই লিটন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। ক্লিনশেভড লিটনের পরনে ছিল সাদা ফুলহাতা শার্ট ও কালো প্যান্ট। তিনি বের হয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সমর্থকরা তাকে ফুলের মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানান। সাংবাদিকরা এ সময় প্রশ্ন করার চেষ্টা করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন। যে গাড়ি থেকে গত ২ অক্টোবর শিশু সৌরভকে গুলি ছুড়েছিলেন সেই গাড়িতে চড়েই তিনি কারাগার থেকে বাড়ি ফেরেন। গাড়িটি গাইবান্ধা শহরের আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়িতে আসে। সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে তিনি সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা সংলগ্ন উত্তর শাহবাজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। লিটনের এলাকায় আসার খবর সুন্দরগঞ্জ ও তার গ্রামের বাড়ি বামনডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় পৌঁছলে সেখানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। তার সমর্থকদের দাবি, লিটন আগের মতোই সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে লিটনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, জামিন পাওয়ার পর লিটনের সমর্থনে একটি মহল আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। এদিকে গুলিতে আহত সৌরভদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা সাজু মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে মা সেলিনা বেগমসহ কিছু আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী বাড়িতে ছিলেন। ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রেতা সাজু মিয়া ব্যবসায়িক কাজে বাইরে গেছেন বলে তারা জানান। ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে ছিল সৌরভ। লিটনের এলাকার আসার কথা সে শুনেছে কি-না জিজ্ঞেস করলে মাথা নেড়ে জানায়, 'মাইনসে খবর দিচে হামার বাড়িত তাইন (এমপি) বলে আসবে।' কেন আসবে_ এ প্রশ্নের উত্তরে সৌরভ জানায়, 'তা মুই কবার পাম না। তবে মোর ভয় নাগব্যার নাগচে। তোমরা দেখেন হামারঘরে য্যান কোন ক্ষতি না হয়।' সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকায় ২ অক্টোবর ভোরে সাংসদ লিটনের পিস্তলের গুলিতে গুরুতর আহত হয় গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভ। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শিশু সার্জারি বিভাগে ২৪ দিন চিকিৎসা নিয়ে ২৬ অক্টোবর দুপুরে সে বাড়ি ফেরে। এ ঘটনায় সৌরভের বাবা বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর সাংসদ লিটনকে একমাত্র আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। একই দিনের ঘটনায় বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ৬ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ থানায় আরও একটি মামলা হয়। গত ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরার বোনের বাসা থেকে লিটনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন ভোরে তাকে মাইক্রোবাসে গাইবান্ধা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর তাকে গাইবান্ধা অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ২৪ দিন কারাভোগ করার পর জামিনে মুক্ত হয়ে নিজ বাড়ির সামনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি সাদুল্যাপুর হয়ে সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম সাহাবাজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে বাড়ির উঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এদিকে সৌরভের বাবা সাজু মিয়া লিটন জামিনে মুক্ত হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় তার জামিন হয়েছে। এখানে মন্তব্যের কিছু নেই। তবে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। ০৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে