গোলাম মওলা : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালী ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।
পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা।
এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর পর বাংলা ট্রিবিউনকে এসব প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
প্রসঙ্গত যে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এ সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় ইতোমধ্যে শিল্পায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মংলা বন্দরে পদ্মা সেতুর সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে।’
সাবেক এই মন্ত্রীর মতে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় ‘শিল্প বিপ্লব’ ঘটবে। ২০১৮ সালের পর অর্থনীতিতে এর সুফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘২০৫ একর জমি নিয়ে এই অঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। এই অঞ্চলে ইপিজেড আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সবই হচ্ছে পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে। খান জাহান আলী বিমানবন্দর এখন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে। রেলের কাজও চলছে পুরোদমে। এর সঙ্গে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ এবং পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।’
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। খুলনা চেম্বারের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততম হবে। এতে সময় ও যাতায়াত খরচ কমবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ অঞ্চল থেকে দেশের দূর-দূরান্তে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে উপকৃত হবেন। খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা নিশ্চিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি আসবে, আয় বৈষম্যও কমে যাবে।’
খুলনা চেম্বারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলার গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। বাংলা ট্রিবিউন
এমটিনিউজ/এসএস