মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:০৫:০২

অবাক ঘটনা: এবার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীতেও পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

অবাক ঘটনা: এবার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীতেও পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

নিউজ ডেস্ক:  ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলছে। এখানে এমন ইলিশের প্রাচুর্য আগে কখনো দেখা যায়নি। শুধু ব্রহ্মপুত্রের নয়, তার সাথে সংযুক্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সামুদ্রিক আর লোনা পানির মাছ বলে চিরাচরিত ধারণাও এবার যেন বদলে গেছে। পদ্মা-যমুনা ব্রহ্মপুত্র হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এখন চলে যাচ্ছে ভারতের আসাম রাজ্যে।

ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে শত শত মণ ইলিশ ধরে তা বিক্রি করেছে জেলেরা। দরিদ্ররাও দীর্ঘদিন পর ইলিশের স্বাদ পেয়েছেন। প্রকাশ্য বেচতে না পারলেও গোপনে ইলিশের বাণিজ্য হয়েছে কোটি টাকার। প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ এ সময়ে ৬০ লাখ টাকার জাল পুড়িয়ে দিলেও বন্ধ ছিলো না ইলিশ ধরার উৎসব। দীর্ঘদিন পর জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা। দামও ছিল সাধারণের হাতের নাগালে।

প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর সোম ও মঙ্গলবার জালে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়লেও দাম বেড়ে যাওয়ায় তাতেই পুষিয়ে যাচ্ছে জেলেদের। মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাটিতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা সফল হওয়ায় এবং নদীতে পানির প্রবাহ বেশী থাকায় এ বছর ব্রহ্মপুত্র ও তার সংযুক্ত নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে ।

সোমবার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছের পাইকাররা নৌকা বোঝাই বরফ আর বাক্স নিয়ে নদের ভেতরে ছুটে গেছেন জেলেদের কাছে।এই এলাকার পাইকার জয়নাল ও মাঈদুল জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ের তুলনায় অর্ধেক মাছ ধরা পড়ছে। তবে দাম বাড়ায় জেলেদের পুষিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ইলিশ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি।

চিলমারীর মৎস্য আড়তদার ফুল মিয়া জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও তারা প্রকাশ্যে বেচতে পারেননি। জেলেরা সরাসরি বিক্রি করেছে। সোমবার দুপুরের পর অন্তত- ২০ মণ ইলিশ চিলমারীর ঘাটে এসেছে।

ব্রহ্মপুত্র পারের বাসিন্দারা জানান, গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ছিল নদ-নদীতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ বছর আকস্মিকভাবে ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে থাকে। যার বেশীর ভাগই ছিল ডিমওয়ালা। জেলেরা ডিঙি নৌকায় কারেন্ট জাল নিয়ে রাতভর ইলিশ ধরে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর এখনও দিনে-রাতে ইলিশ ধরছে ।

চিলমারী, যাত্রাপুর, মোল্লারহাট, নুনখাওয়াসহ ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে গভীর রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শত শত মন ইলিশ মাছ বেচাকেনা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা এসে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি ধরে সুস্বাদু এ ইলিশ মাছ কিনেছে। পরবর্তীতে দাম বেড়ে যাবে বলে কেউ কেউ ফ্রিজে মজুদ করেছে ব্রহ্মপুত্রের ইলিশ।

যাত্রাপুর নৌকার মাঝি আব্দুস সামাদ জানান, মোটর মাইকেল যোগে শত শত ক্রেতা এসে যাত্রাপুর ঘাট থেকে ব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে গেছেন ইলিশ।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রতিদিন এক-একটি নৌকা দেড় মণ থেকে ৩ মণ পর্যন্ত ডিম ভর্তি ও ডিম ছাড়া ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম। ক্রেতাদের কাছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে সরাসরি বিক্রি করেছে জেলেরা। অনেকেই আগে থেকেই চুক্তি করে ইলিশ পৌঁছে দিয়েছে ক্রেতাদের বাড়িতে।

জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে ১৫২টি অভিযান ও ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫৭৭ কেজি ইলিশ আটক কয়েকজনকে জেল জরিমানা করা হয়। এ সময়ে ৬০ লাখ টাকা মুল্যের ২ লাখ ৯৬ হাজার মিটার জাল আটক করে ধবংস করা হয়। তারপরেও বন্ধ করা যায়নি ইলিশ ধরা।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউপি সদস্য রহিম উদ্দিন রিপন জানান, প্রতি বছর জেলেদের জালে দু’একটি ইলিশ ধরা পড়লেও ব্রহ্মপুত্রে কখনই এতো ইলিশ দেখেননি তারা।

হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে কয়েকশ জেলে ব্রহ্মপুত্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও নদীতে মাছ না থাকায় তারা খুব কষ্টে জীবন যাপন করে। এ বছরের মতো ইলিশ ধরা পড়লে তাদের জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকার মানুষ সহজেই ইলিশ খেতে পারবে।

যাত্রাপুরের পোড়ারচরের ছামছুল হক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ ইলিশ খাইতে পারি নাই। দামে সস্তা হওয়ায় এবার সবাই ইলিশের স্বাদ পাইছি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় মূলত ইলিশ ছুটে এসেছে ব্রহ্মপুত্রে। নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করা গেলে ভবিষ্যতেও এমন ইলিশের প্রাচুর্য থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে