নিউজ ডেস্ক: বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিবেশ মেনে নিয়েই সবাইকে নির্বাচনে আসতে হবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) । তিনি বলেন, এবার যদি কেউ (কোনও দল) নির্বাচনে না আসে তাহলে মুশকিল আছে। এবার সব পার্টিকেই নির্বাচনে আসতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে কমিশনের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাবেক এই সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
নির্বাচন কমিশনের এখন থেকে এক বছরের মধ্যে এমন কিছু করা যাবে না তাতে আস্থা বিনষ্ট হয়। কমিশনের প্রতি আস্থা তো হয়েই গেছে, এটাকে ধারণ করতে হবে। দরকার হলে আরও পরিবর্ধন করতে হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টায় সিইসি কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবেক দুই কমিশনার, ৭ জন কমিশনারসহ ১৬ জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এটিএম শামসুল হুদা বলেন, প্রতিবারই নির্বাচন এলেই আমরা কিছু কিছু এটা করি, ওটা করি। ছোট ছোট পদক্ষেপে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে না।
এজন্য নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী করতে দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করতে হবে। এজন্য কমিশনের নিজেকেই অনেক শক্তিশালী করতে হবে।
এরইমধ্যে কিছু কাজ আমাদের মধ্যে হয়ে গেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এখন মানবসম্পদ বাড়াতে হবে। আমরা বলেছি, ভবিষ্যতে আপনাদের নির্বাচন করতে হলে নিজস্ব কর্মকর্তাদের থেকে বাছাই করে রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। আমরা এটা সীমিত আকারে শুরু করেছিলাম, এটাকে আরও ব্যাপক করতে হবে।
আইন ও বিধিবিধানের পরিবর্তন ও সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন যেগুলো আছে এগুলোকে অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং তাদের এখতিয়ারের বাইরেরগুলো বাছাই করে করণীয় ঠিক করতে হবে। সীমানা পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য গ্রাম্য এলাকার অনেক আসন কমে যাচ্ছে আর ঢাকায় বাড়ছে। বাস্তবতা হলো এখানে কাউকেই দোষারোপ করা যাবে না। কারণ,আইন সেটা আছে সেভাবে করতে গেলে এটা হবে।
কারণ, বাংলাদেশসহ বিশ্ব এখন শহরমুখী। এজন্য এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সব দলের সঙ্গে কথা বলে সংবিধান পরিবর্তন করে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সিট আরও বাড়ানোর বিষয় আসতে পারে। আসতে পারে শহরের সিটগুলো নির্ধারণ করে দেওয়ার। এতে অনেক রকম তরিকা হতে পারে।
সংসদ নির্বাচনের আগে যে সংলাপ হয় তাতে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, এখানে বেশি হলে এক বছর সময় আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের একার বিষয় নয়। এখানে অনেক প্লেয়ার আছে। এখানে রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। গত নির্বাচনে বয়কটের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য এবার রাজনৈতিক দলের সজাগ থাকতে হবে। সবাই যেন নির্বাচন করেন। সেই মনোবৃত্তি সকলের মধ্যে থাকতে হবে।
বর্তমান সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে ভোট সম্ভব নয় মন্তব্য করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ এটা তো সংবিধান সংশোধনের বিষয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকার যে হবে না এটার একটা সংশোধনী ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এর পিঠাপিঠি এই টাইম ফ্রেমের মধ্যে যদি অন্য কিছু করতে হয়, তা পারা যাবে না। আর নির্বাচন কমিশন এটা করতে পারবে না। এটা রাজনৈতিক বিষয়।
তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়টি আলাপই হয় নি। কারণ এখানে যারা এসেছেন তারা বুঝতে পেরেছেন এটা নিয়ে এখানে আলোচনা করে লাভ নেই।
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনে রাজনৈতিক দলের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার মধ্যে এটা করতে হবে। বিচারবিভাগ এখন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট এখন কেবল জুডিশিয়াল সার্ভিসের লোকজন হন। এখানে আর্মিকে ওই ক্ষমতা দেবেন কী করে।
বিদ্যমান আইনে যেভাবে আছে তার বাইরে গিয়ে সেনা মোতায়েন করা যাবে না। আস্থার বিষয়টি কমিশনকে অর্জন করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল যদি মনে করে মোটামুটি একটি ভালো নির্বাচন হবে তখন তারা নির্বাচনে আসবে। নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে নির্ভয়ে যেতে পারে এবং ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে সেটা বিজিবি, র্যাপ ও পুলিশের মাধ্যমে করা সম্ভব।
সাবেক কমিশনার ছহুল হোসাইন মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ ইসি নিতে পারেন। তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে তা মিটিয়ে সবাইকে নির্বাচনে আনতে একটি উদ্যোগ কমিশন নিতে পারে। কারণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব। এই নির্বাচন করতে সবাইকে নিয়ে কথা বলতে পারে। তবে এই উদ্যোগ যে সফল হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। এটা ফেল করলে কমিশনকে দায় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি কমিশন যেন শক্তভাবে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে যারা দায়িত্ব যারা পালন করবেন তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তারা নিরপেক্ষ না থাকলে যতই উদ্যোগ নেওয়া হোক তা কাজে লাগবে না। এজন্য যাদের নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের আগে থেকে সিলেক্ট করে মোটিভেট করতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
সাবেক সিইসি আব্দুর রউফ তার প্রস্তাবে স্থায়ী ভোট কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রতি ৫শ’ ভোটের জন্য একটি করে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন। এসব ভোটকেন্দ্র ভোটারদের মাধ্যমে পরিচালনার কথা বলে তিনি বলেন, কথা হচ্ছে ভোটাররা ভোট দেবেন, ক্ষমতায় যারা নির্বাচিত হবেন তারা যাবেন। জনগণ হচ্ছে ভোটের মালিক,তারাই ভোট চালাবে।
ভোটের দিন এসপিও থাকবে না, ডিসিও থাকবে না। তৃণমূল পর্যায় যদি ভোটাররা ভোট পরিচালনা করেন, তারাই যদি আইন-শৃঙ্খলার ভার নেন তাহলে কোনও সমস্যা থাকবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আর নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সাবেক কমিশনার শাহ নেওয়াজ তার প্রস্তাবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন ও সংবিধান যেটা আছে সেটাই যথেষ্ট। এর বড় কোনও পরিবর্তন দরকার আছে বলে মনে হয় না।
কমিশনের মূল লক্ষ্য থাকবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা। যেহেতু সংলাপে সব দল অংশ নিয়েছে। আমি মনে করি, তারা নির্বাচনেও অংশ নেবেন। এজন্য নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করার বিষয়ে কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, একটি বড় দল নির্বাচনে না আসায় কিছূ বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। এবার মনে হচ্ছে সবাই আসবে। কাজেই সেই ধরনের পরিস্থিতি এবার হবে বলে মনে হয় না। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস