বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:২৭:২৩

মিয়ানমারের এবার ‘এনডিসি’ ফাঁদ!

 মিয়ানমারের এবার ‘এনডিসি’ ফাঁদ!

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার সেনার নির্যাতনে সম্প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর পরও মংডু ও বুচিডং শহর এবং শহরতলিতে একটি অংশ রয়ে গেছেন।

তারা পেশাদার ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী। তাদের ব্যবহার করে নতুন ফাঁদ পেতেছে মিয়ানমার। ওই ব্যবসায়ীদের দেয়া হচ্ছে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনডিসি), যাতে জাতীয়তার ঘরে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশি’।

সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষা, ব্যবসা টিকিয়ে রাখা- সর্বোপরি মিয়ানমারে থাকার আশায় এ কার্ড নিচ্ছেনও তারা। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে পারেননি, তাদের নাগালে পেলেও এ কার্ড নিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য সীমান্ত থেকে তাদের সরিয়ে মিয়ানমারের ভেতরে নেয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম বলেন, রেঙ্গুনের এরাউদীভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'ম্যাক্সিমা'য় প্রকাশিত এক সংবাদে প্রথম বিষয়টি জানতে পারি।

ওই সংবাদে বলা হয়েছে- মংডু ও বুচিডংয়ে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ রোহিঙ্গারা এনডিসি কার্ড নিচ্ছেন। এর পর আমরা সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

জানতে পারি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী পেশাদার ব্যবসায়ীদের এনডিসি কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, এ কার্ড নিলে তারা মিয়ানমারে থাকতে পারবেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে পারবেন। বড় ব্যবসা ও বিপুল সম্পদ হাতছাড়া না করতে ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে তারা কার্ড নিচ্ছেন।

জাফর আলম বলেন, এ কার্ড নেয়ার অর্থ হচ্ছে- 'আমরা বাংলাদেশি, ব্যবসা করতে এখানে এসেছি। মিয়ানমারের নিয়মকানুন মেনে আমরা ব্যবসা করব।' তিনি বলেন, যদি থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ১০ শতাংশও এ কার্ড গ্রহণ করে, তবে এ পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের ফিরে যাওয়া আরও কঠিন হবে।

ওই এনডিসি কার্ড দেখিয়েই মিয়ানমার প্রমাণ করতে চাইবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি। আর বাংলাদেশিদের ফেরত না নেয়ার জন্য তো ইতিমধ্যেই মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধরা বিক্ষোভ শুরু করেছে। জাফর আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ঠেকাতে এটি ফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়। স্বার্থ উদ্ধার হলে ভবিষ্যতে এসব ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্যও করা হতে পারে।

জাফর আলমের কথার প্রতিধ্বনি বুচিডং থেকে আসা মাস্টার ইয়াকুব আলী এবং মংডুর শহরতলি থেকে আসা অলি উল্লাহর কণ্ঠেও।

তারা বলেন, মংডু ও বুচিডং শহর এবং শহরতলিতে এখনও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন। তাদের প্রায় সবাই ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত। এসব ব্যবসায়ী ব্যবসার স্বার্থে এনডিসি কার্ড নিচ্ছেন।

তারা আরও জানান, এ ছাড়া আকিয়াবের আইডিপি ক্যাম্পের ২ লাখ ৯০ হাজার এবং কিয়াত্তর ও মাম্ভ্রারা এলাকায় আরও ২ লাখ রোহিঙ্গা এখনও রয়ে গেছে। তাদের মধ্যেও মিয়ানমার সেনা সদস্যরা এনডিসি কার্ড বিতরণ করছে। জন্মভূমিতে থাকতে পারবেন- এ আশায় তারা তা গ্রহণও করছেন।

আরেক রোহিঙ্গা নেতা ফয়সাল আনোয়ার বলেন, মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন, তারা যদি এনডিসি কার্ড গ্রহণ করেন তা হলে রোহিঙ্গারা বাঙালি বলে প্রমাণিত হবেন।

ফলে এ দেশে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে মিয়ানমার অংশে অনেক রোহিঙ্গা দুয়েক দিনের মধ্যে জড়ো হয়েছিলেন, যাদের মঙ্গলবার বাংলাদেশে ঢোকার কথা।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ভেতরে সরিয়ে নিয়েছে। এনডিসি কার্ড দেয়ার জন্যই তাদের ভেতরে নেয়া হয়েছে।

২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরু হলে বাংলাদেশে পাড়ি জমান সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। কিন্তু সেখানকার বড় ব্যবসায়ীরা এতদিন বিপুল অর্থ খরচ করে সেখানে রয়ে গেছেন।

তাতেও টিকতে না পেরে সম্প্রতি বাংলাদেশের পথ ধরেছেন কেউ কেউ। যারা আসেননি তাদের হাতেই এনডিসি কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে