রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৫৮:২৭

রোহিঙ্গাদের ইতিহাস বর্তমান সবটাই চক্রান্তে আচ্ছন্ন

রোহিঙ্গাদের ইতিহাস বর্তমান সবটাই চক্রান্তে আচ্ছন্ন

মুস্তাফা জামান আব্বাসী : আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সংবাদপত্রে যতটুকু পাঠ করেছি তাতেই মন বিষিয়ে উঠেছে। বড় শক্তিগুলো সম্মিলিতভাবে আমাদের অপমান করার জন্য সংগঠিত।

কষ্ট পাই। গভীর রাতে স্বপ্নে দেখি আমার কাছে পৃথিবীর সব অস্ত্র জমা হয়েছে। আমি প্রস্তুত হয়েছি ওদের ওপর মারণাঘাত হানতে। জেগে উঠে দেখি, ওগুলো স্বপ্নের জিহাদ, কোনোটাই সত্যি নয়।

রোহিঙ্গাদের ইতিহাস, তাদের উত্থান এবং বর্তমান পতন সবই চক্রান্তের অঙ্গীভূত। সব জেনে শুনে নিথর হয়ে বসে আছি। যতটুকু না করার নয়, ততটুকু করেছে সরকার। এখন শুধু সয়ে যাওয়া, আর দেখার, ওরা কী করে। ওরা যা করবে আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখব, অথবা ওদের সমর্থন করব।

এর সমাধান আমাদের কাছেই ছিল, কিন্তু তা আমরা ভুলে গেছি। এ কথা পুনর্বার নিজদের বোঝাতেই হবে যে আমরা পৃথিবীতে হয় মুসলমান হয়ে বাঁচব অথবা ওদের বশীভূত হয়ে ওদের বাঁশি বাজাব। যেটা পছন্দ, সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ। মিলেমিশে থাকা আর হবে না। হয় সত্য বেছে নিন, নয় মিথ্যার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধুন।

মুসলমানদের কেউ পছন্দ করবে না, এটাই বিশ্বের মত। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই আমাদের পরাজয়ের নিশান বিলুণ্ঠিত। কবিরা কবিতা লিখেছেন। অনেক সংকলন বেরিয়েছে। সেগুলো পড়ি আর মনে মনে হাসি। সংকলনে কিছুই আসবে যাবে না। হাতিয়ার বানিয়েছে যারা, সুচির নোবেলকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের দিকে রাইফেল তাক করে বসে আছে।

সুচি যদি নোবেল পরিত্যাগও করেন, লাভ হবে না। ইতিহাসের গতি অন্যদিকে। ‘স্যার’ উপাধি পরিত্যাগ করেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এতে ব্রিটিশ মোটেও দমে যায়নি। আরও পূর্ণ গতিতে কামানগুলো তাক করেছিল আমাদের দিকে, পরাধীনেরা যাতে আরও পরাস্ত হয়। তাদের গোলামি এখনো। ‘স্যার’ উপাধি আমাদের মাথার মুকুট।

বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকলে এই মুকুট পরতাম না। বাংলাদেশের পুব সীমান্তে গণ্ডগোল লাগিয়ে মার্কিন শক্তি বঙ্গোপাসাগরে ঘাঁটি বানাতে ইচ্ছুক। ভারতের অনাপত্তি, কারণ তারাও বুঝেছে চীন এলো বুঝি ওই এগিয়ে। নরেন্দ্র দামোদর মোদির মুখের চেহারা গেছে বদলে, নানান রঙের কোটিগুলো সব আলমারিতে।

কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছেন চীনাদের অগ্রগতি রোধ করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কোনোভাবে মার্কিনিদের সহায়তায় ভারত মহাসাগরকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে ওটিও চীনাদের দখলে চলে যেতে আর দেরি নেই। তাই যেমন করে হোক, ডোনাল্ড-দামোদরের সখ্যকে বলিষ্ঠ করা প্রয়োজন। এর জন্য বাংলাদেশ বা রোহিঙ্গার কয়েক লাখ মুসলমানের আত্মাহুতি দিতে তার কোনো সমস্যা নেই।

মুসলমান দেশগুলোকে একটি একটি করে ধ্বংস করার পরিকল্পনা মার্কিনিদের বহুদিনের। তারা সফলতা পেয়েছে। যদিও কোনো সাফল্যই চূড়ান্ত নয়। ভবিষ্যতের ইতিহাস ভবিষ্যৎই লিখবে, ডোনাল্ড-দামোদর নয়। যত পরিকল্পনাই হোক, সব পরিকল্পনা একমাত্র স্রষ্টার। রোহিঙ্গাদের সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছেন।

তিনি প্রমাণ করেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সত্যের পথে আছেন বলে সত্য তাকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি কারও চেয়ে কম নয়। আমাদের একেকজন সৈনিক মিয়ানমারের সৈনিকের সাত গুণ সমান, এমনকি ভারতীয়দের চেয়েও। এটি প্রমাণিত। মুখের কথা নয়। কারণ একটিই। আমাদের সৈনিকদের হাতে কোরআন, ওদের হাতে রাইফেল। ‘বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই’।

সে লড়াই আমরা চাই না। সুচি আমাদের লোকদের সরিয়ে নিক, যদি না পারে পদত্যাগ করুক। দুনিয়ার সামনে তার শান্তির পদকটি ফিরিয়ে দিক। ভারত যদি আমাদের বন্ধু হয়, তাহলে তো ভালোই। বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে তারা পালিয়ে যাবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। পরিস্থিতি যখন বেসামাল হবে তখন বন্ধুও হবে শত্রু। এটাই ইতিহাস বলে।

চিরকালের বন্ধু বা চিরকালের শত্রু বলে কিছু নেই। শোনা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি হয়েছে। সে চুক্তির কাগজপত্রগুলো কোথায়, তা কেউ জানে না। মুহাম্মদ ইউনূস এত দিনে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, শান্তির পায়রার প্রহরী অং সান সুচি নন। তিনি শান্তির বিপক্ষে, জেনারেলদের পকেটে। তার প্রমাণ লাখ লাখ মানুষের দেশত্যাগ এবং আমাদের আশ্রয়শিবিরগুলোয় তাদের কোনোভাবে দিন গুজরান।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ রোহিঙ্গাদের দুঃখে মুহ্যমান। প্রতিটি মানুষ সাহায্য জোগাড় করছে। আমরাও। আমরা ওদের পাশে আছি। বিদেশি পর্যটকরা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন যে হিটলার, ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তানি দুশমনরা ‘কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমানে’। আমরা নির্যাতিত। আমরা পৃথিবীর মানুষের সামনে আবেদন করছি আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেবেন না।

কোনোক্রমে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছি। ‘ফেইল্ড স্টেট’ পাকিস্তানের চেয়ে ভালো আছি। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ বাদশাহদের চেয়েও আমরা ভালো আছি। কারণ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে। কারও ক্ষতি করিনি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মদদ দিও। বিডি প্রতিদিন

লেখক : সাহিত্য-সংগীত ব্যক্তিত্ব
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে