মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭, ০১:১৬:০৪

খালেদার গাড়িবহরে হামলা, ফাঁস হওয়া কথোপকথনে এই কণ্ঠস্বর কার?

খালেদার গাড়িবহরে হামলা, ফাঁস হওয়া কথোপকথনে এই কণ্ঠস্বর কার?

ফেনী থেকে : 'একদম সব ঠিকঠাক আছে। পোলাপান সব রেডি করে দিছি। আমনে কোনো টেনশন কইরেন না। কোনো সমস্যা হইতো না। ম্যাডামের গাড়িতে কোনো ঢিল-মিল পড়ত না। দলের গাড়িতে ঢিল মারত না। চ্যানেলের গাড়িতে মারব। লোকাল দুই-তিনড্যারে বুঝাইয়া দিছি। টিয়া-পইস্যা বুঝাইয়া দিছি।'

ফেসবুক ও ইউটিউবে সোমবার ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি অডিও রেকর্ডে দুই ব্যক্তির মধ্যে এমন কথোপকথন রয়েছে। ফোনের ওপাশ থেকে জানতে চাওয়া হয়, সব ঠিকঠাক হয়েছে কি-না। এছাড়া ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে হামলা করতে টাকা দিয়ে ভাড়া করতেও বলা হয়।

হামলার পর দোষ কীভাবে তাদের ঘাড়ে বর্তাবে, সেই পরামর্শ দেওয়া হয় সেখানে। এরপর ফোনের এপাশ থেকে বলা হয়, 'লিডার, সব ঠিক আছে্ একটু খেয়াল রাখবেন।' অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এই কণ্ঠস্বর কার, তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে অডিও রেকর্ডটি শুনিয়ে বলেন, 'ওই অডিওতে হামলার নির্দেশদাতার কণ্ঠস্বরটি চট্টগ্রাম বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের। কারা এমন ঘটনা ঘটিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ঘোলা করতে চায়, তা জানা প্রয়োজন। এসব দুস্কৃতকারীকে খুঁজে বের করা হবে।

এদিকে, সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইন্টারনেটে আসা অডিও টেপে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে যার কণ্ঠ শোনা গেছে, সেটি তার নয়। তিনি দাবি করেন, ওই কণ্ঠ ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শাকার।

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে এসেছে, এ হামলার মূল দায়িত্বে ছিলেন ফেনীর শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া ও ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকা। আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাতকে তার নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা শাহাদাত।

এদিকে, ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকা ও শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করেন, ওই কণ্ঠ তাদের নয়। খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও অস্বীকার করেন তারা।

গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, অডিও রেকর্ডের বিষযটি নিয়ে তারা তদন্ত করছেন। তবে সেটি কার, এ ব্যাপারে সন্দেহাতীতভাবে বলার মতো তথ্য-উপাত্ত এখনও তাদের কাছে নেই। এছাড়া হামলার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি ও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান জানান, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও বার্তাটি তারা দেখেছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

শনিবার ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার জন্য আওয়ামী-বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করে আসছেন। এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থার মধ্যে এই অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলো।

চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শাকার নামের জায়গায় আমার নাম দিয়ে এ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এটা করছে।

বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'যে অডিও টেপ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে শব্দ, কণ্ঠ, উচ্চারণ কোনোটাই তার কথার সঙ্গে মিল নেই। ওই কথোপথনে নোয়াখালীর আঞ্চলিকতার টান আছে। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভুয়া অডিও ছাড়া হয়েছে সেটা তদন্ত করা উচিত। যে হামলার নির্দেশ দিয়েছে, তদন্ত করে তাকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।'

তিনি বলেন, '৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কাউকে গালি দিয়ে কথা বলিনি। সুস্থ ধারার রাজনীতি করেছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে সবসময় মানুষের জীবন রক্ষায় এগিয়ে গেছি। তাই কারো ওপর হামলার নির্দেশ দিতে পারি না। এ ধরনের রাজনীতি করি না। হামলাকারীদের ছবি এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই এর সঙ্গে কারা জড়িত, সেটাও এখন স্পষ্ট।'

ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকা বলেন, তার সঙ্গে কারও এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। ঘটনা ঘটেছে শর্শদিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায়। বেগম জিয়ার বহরে হামলা করার কোন প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, হামলার ঘটনা শোনার পর এলাকার যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের মধ্যেও কেউ এ হামলার সাথে জড়িত নয়। এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে তার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি বিব্রত বলে জানান। আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করতেই তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে জানান তিনি।

এদিকে, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডে নিজের সম্পৃক্তার কথা অস্বীকার করেছেন শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূইয়াও।

তিনি বলেন, 'পাশাপাশি ইউনিয়ন হওয়ায় আমার সাথে ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকার প্রায়ই কথা হয়। কিন্তু হামলার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি। রেকডিং যদি পরীক্ষা করা হয় তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।'

তিনি জানান, ঘটনার দিন বিকেলে ফেনী পৌরসভায় ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জঙ্গি বিরোধী সভা ছিল। মিটিং চলাকালীন ফেনী থানা পুলিশ থেকে হামলার খবর পাই। এ সময় পুলিশ জানায়, ওই জায়গায় তাণ্ডব হচ্ছে। ধর্মপুর ও শর্শদি ইউনিয়ন পাশাপাশি হওয়ায় আমাদের দুই জনকেই টেলিফোন করে পুলিশ।

জানে আলম আরও জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি মূল ঘটনাস্থলের নয়। হামলাকারী হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ওসমান গণি রিয়েল, কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য সবুজ ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ফরহাদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগকে দায়ী করতে পরিকল্পিতভাবে তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না।  সমকাল

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে