মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:২৬:৩৮

জাতীয় সংলাপের বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি জোট

জাতীয় সংলাপের বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি জোট

হাবিবুর রহমান খান: খালেদা জিয়া যখন স্বীকার করবেন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত, তখনই তিনি সংলাপে বসার যোগ্যতা অর্জন করবেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপিসহ তাদের জোট শরিকরা। তাদের ধারণা, ক্ষমতাসীনরা এতদিন সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে এলেও সেই অবস্থান থেকে তারা কিছুটা সরে আসছেন। সংকট নিরসনে উভয় পক্ষ আন্তরিক হলে জামায়াত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন তারা। জোটের শীর্ষনেতারা মনে করছেন, জামায়াতকে নিয়ে বড় দুটি দল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত। দেশের স্বার্থের চেয়ে উভয়েই নিজ নিজ রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে। তবে সংলাপের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলকেই এই ব্যাপারে ছাড় দিতে হবে। রাজনৈতিক অংক মিললে জামায়াতকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বিএনপি। কারণ, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে ছাড়তে দলের ওপর দেশী-বিদেশী নানা চাপ রয়েছে। সম্প্রতি সর্বদলীয় বৈঠক বা জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ক্ষমতাসীন জোট ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল এমনকি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একই দাবি জানিয়ে আসছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তা প্রত্যাখ্যান করে এলেও রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। যদিও বিএনপি ও জোটের নেতারা মনে করছেন, সংলাপে বসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। সংলাপে বসার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী একটি শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। যার অর্থ বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলছেন না ভবিষ্যতে তারাও জামায়াতকে কাছে টানবেন না। দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে নানামুখী চাপে আছে বিএনপি। দলের ভেতরে এবং বাইরের এই চাপ দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তবে এখনও দলটির সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এতদিন তিনি সংলাপ প্রত্যাখ্যান করলেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। শর্ত দিয়ে হলেও তিনি সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে বরফ গলা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সূত্র জানায়, জামায়াতকে জোট থেকে ছাড়ার আগে রাজনৈতিক হিসাব করা হচ্ছে। জামায়াত ছাড়ার আগে বেশ কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চায় দলটি। আওয়ামী লীগ কখনও জামায়াতকে নিয়ে জোট করবে না- এমন নিশ্চয়তা পেলেই জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি ভেবে দেখবে। একইসঙ্গে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের সবুজ সংকেতও চাচ্ছে তারা। এসবের নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন দেয়াসহ ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেবে দলটি। জামায়াত নিয়ে সরকার ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে না-- এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ব্যাপারে কৌশলী ভূমিকাই পালন করবে বিএনপি। তারাও স্পষ্ট করে কিছু বলবে না। মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে প্রকাশ্যে দলটি কোনো বিরোধিতা না করলেও সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ক্ষমতাসীনরা এই বিচার করছে। তবে পাবলিক সেন্টিমেন্টের কারণে প্রকাশ্যে এই বিচারের বিরোধিতা করছে না। তবে বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করছে। বিচারটাকে আন্তর্জাতিক মানের করার দাবি দলটির। রোববার বিএনপি মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি- যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধের সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার চাই। এ প্রশ্নে আমাদের সমর্থন রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলছেন অথচ তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছেন না। এটা রহস্যজনক। সরকার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করবে। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী বিচারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে তা সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। শুধু আমরা নই, জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সবাই একই দাবি করে আসছে। সরকারের সুযোগ থাকার পরও কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে বসতে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি সবার সঙ্গে আলোচনা করে জোটনেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের পরামর্শ বা নির্দেশে তো তা হবে না। সরকার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে তবে তাদের জোটে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। জোটের আরেক শরিক বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ হতেই হবে। তবে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রী জামায়াত ছাড়ার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা রাজনৈতিক কৌশল। কারণ এর আগে তিনি বলেছেন, হরতাল অবরোধ বা সন্ত্রাস বন্ধ করলেই সংলাপ হতে পারে। আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি কই সংলাপ তো হয়নি। কে রাজনীতি করবে আর কে করবে না এসব শর্ত দিয়ে কখনও সংলাপ হয় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সম্মতি জানালেই সংলাপের বিষয়ে বিবেচনা করবে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। পার্থ বলেন, এতদিন তো সংলাপের বিষয়টি পাত্তাই দেয়নি। সংলাপ এড়িয়ে সরকার হয়তো তাদের ক্ষমতাকে কিছুদিন বেশি ধরে রাখতে পারবে। একসময় তারা নিজেরাই অনুভব করবে সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে।-যুগান্তর ১০ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে