বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৬:৩৫

বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব বাড়ছে, তা আরো খোলাসা হয়েছে...

বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব  বাড়ছে, তা আরো খোলাসা হয়েছে...

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী দুই দল এখন অনেকটা আলাদা পথেই হাঁটছে। খালেদা জিয়াকে ঘিরে বিএনপির সাম্প্রতিক শোডাউনে তা আরো খোলাসা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় শোডাউন করেছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের যাওয়ার পথে মহাসড়কে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি রাজনীতিতে এক ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।

অতীতে বিএনপি নেত্রীর এমন যেকোনো কর্মসূচিতে জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে নিজেদের উপস্থিতির জানানও দিতেন তারা।

তবে, এবার খালেদা জিয়ার সফরে কোথাও জামায়াতের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাজপথে ছিলেন না জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী। বিএনপি নেতারা অবশ্য এতে বিচলিত নন। কারণ শীর্ষ নেতারা চান জামায়াত দূরেই থাক।

প্রায় দুই দশক ধরে জামায়াত বিএনপির জোট সঙ্গী হলেও গত কয়েক বছর ধরে দল দুটির মধ্যে নানা ইস্যুতে মতভেদ দেখা গেছে। বিশেষকরে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে প্রথম এ দূরত্ব তৈরি হয়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবার এরইমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

ওই বিচারের সময় বিএনপি জামায়াত নেতাদের পক্ষে কোনো অবস্থান নেয়নি। যদিও জামায়াত সেসময় রাজপথে সহিংস বিক্ষোভ করেছিল। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও বিএনপি-জামায়াতের দূরত্বের বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট ছিলো। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে অন্য জোট সঙ্গীরা বিএনপির সঙ্গে সরব ছিলো। গঠন করা হয়েছিলো লিয়াজোঁ কমিটিও।

তবে এর কোনো কমিটিতেই জামায়াত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ভোটের প্রচারণাতেও বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন না জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা। স্থানীয় পর্যায়ে বহু এলাকাতেই বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোট করেছেন।

জোটে জামায়াতকে রাখা না রাখা নিয়েও বিএনপির ভেতরে নানা মতভেদ রয়েছে। বিএনপিকে এ জন্য অনেক সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিএনপির অনেক আন্তর্জাতিক বন্ধুরও জামায়াতের ব্যাপারে একধরনের আপত্তি রয়েছে। আগামী নির্বাচনের এক বছরেরও কিছু বেশি সময় বাকি। তবে এরইমধ্যে রাজনীতির মাঠে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সমীকরণ আরো জটিল হবে। বিশেষ করে জোট রাজনীতির নানা সমীকরণ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কেমন তবে তা নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের এখন নিবন্ধন নেই।

তবে দলটির নেতারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অনেক জায়গাতেই জামায়াত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আগামী নির্বাচনেও ৩০ থেকে ৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান জামায়াত নেতারা।

এসব আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন জামায়াত নেতারা। হঠাৎ করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বলাবলি আছে, বন্দি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ‘বিশেষ প্রস্তাব’ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও জামায়াত নেতারা বলছেন, এসব বাজে কথা।

বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পর্কে অতীতে বেশ কয়েকবার ভাঙনের উপক্রম তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর ভাঙেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে এখন সে অর্থে তেমন বড় কোনো যোগাযোগ নেই। জোট সম্পর্ক এখন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।

জোটের খুব কম সভাতেই জামায়াত নেতারা উপস্থিত থাকেন। দলটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই কারাগারে রয়েছেন। নিবন্ধন না থাকায় আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য রাজনীতিতে জামায়াতের সরব হওয়ার তেমন সুযোগ দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা।

এক্ষেত্রে দলটির নেতারা রাজনীতির পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিতেও একইধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বেন। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে নানা শর্ত থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিলের বড় সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক বা কৌশল কী হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। -এমজমিন

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে