ডালিম হোসেন শান্ত : ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেনারেল খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে সেনা অভ্যূত্থান হয়েছিল তা ছিলো সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত । ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরে খুনী চক্রের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল এমন সিদ্ধান্ত নিতে।
এ বিষয়ে কথা বলেছেন কর্নেল অব: জাফর ইমাম বীর বিক্রম। সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো:
আসলে শুধু ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর রক্তাক্ত ছিল না, আমি বলবো পুরো মাসটাই ছিল ইতিহাসে রক্তাক্ত অধ্যায়।
৩ নভেম্বর মূলত দুটি জিনিস সংঘঠিত হয়েছিল প্রথমটা হচ্ছে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান পাশাপাশি সেদিন ভোররাতে আমাদের জাতীয় চার নেতা যারা বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদেরকে জেলেই হত্যা করা।
৩ নভেম্বর আমি ও হুদা খালেদ মোশাররফের সাথে টেলিফোনে আলাপ করি তাকে পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জানানো হয় যে ১০ ইষ্ট বেঙ্গলকে ইতিমধ্যেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ইউনিট যুদ্ধকালীন সময়ে আমার অধীনেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং আমি এর প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিলাম।
আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যা ১৫ আগষ্টের ঘটনা ও ৩ নভেম্বরের জেলহত্যার ঘটানা একই সূত্রে গাথা কিন্তু আমরা নভেম্বর যে একটা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল সে জিনিসটা প্রজন্মকে জানতে দিচ্ছিনা।
কি জন্যে ঘটেছিল? ইতিহাসে এর প্রয়োজন কি ছিল এর তাৎপর্য এখনো দেশবাসি জানেনা এটা দুঃখজনক এটা আমাদের কাছে এখনো প্রশ্ন করে আমি হাফিজ (বর্তমান বিএনপি নেতা) যারা এই অভ্যুত্থানে ছিলাম আমরা চাক্ষুস স্বাক্ষী জেল খানায় আমাদের চার নেতা হত্যা হয়েছে ভোররাতে এটা দুঃখজনক।
এটা অনেকে মনে করে অভ্যুত্থান যদি না হতো তাহলে চার নেতা হত্যার ঘটনা ঘটতো না। যারা এমন ধারণা পোষণ করে তারা কিন্তু জেল হত্যার চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই ধারণা ঠিক না।
৩ নভেম্বরে উদ্দেশ্য ছিল মুশতাক গংদের অপসারণ করা নির্বাসনে পাঠানো তাদের উচ্ছেদ করা। সেদিন জেলখানার দায়িত্বও আমাদের ছিল না আমরা যদি শুনতাম যে জেলখানায় কেউ ট্যাং নিয়ে এ্যাটাক করেছে তাহলে আমরা যেতাম। কিন্তু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নিরবে নিভৃতে গোপনে এটা একটা নীল নঁকশার বাস্তবায়ন ছিলো নইলে জেলে এতো পুলিশ থাকতে কোনো বাধা হলো না।
কেনো সেই সময়ের জেলার মিন্টু তার ডাক নাম ফরিদপুরবাসী উনি প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই জেলের ভিতরে হত্যাকারীদের জিপটি ঢুকতে দেয় এবং হত্যাকারীরা নিরবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বেরিয়ে আসে সেখানে মাত্র চার পাঁচজন ছিল ক্যাপ্টেন নূর সুবেদার মুসলে উদ্দিনসহ কয়েকজন আর জেল পুলিশ ছিল হাজারের উপরে তাহলে কিভাবে পারে।
আমাদের লক্ষ্য ছিল বঙ্গভবন দখল করা মুশতাককে অপসরণ করা। এই সুযোগে তারা আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে আমাদের অজান্তে আমরা যদি জানতাম তাহলে জেলখানায় জেল পুলিশসহ রক্তের গঙ্গা বয়ে যেতো।
আমরা পরের দিন ৪ নভেম্বর মুশতাকের একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম জেল হত্যার উপরে সেটা আমরা ক্যাসেটবন্দি করেছিলাম মুশতাকে সেখানে জবানবন্দী দিয়েছিল মুশতাক সেখানে বলছিল যে আমি জেলখানায় চার পাঁচজনসহ জিপ পাঠিয়ে ছিলাম সেই ক্যাসেটেই সব আছে সেটা এখন কোথায়?
এই চার নেতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে সেটা হয় নাই সেই চার নেতার বিচার আজ অসম্পন্ন মিন্টুর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে? নেওয়া হয় নাই তদন্ত অসম্পন্ন স্বাক্ষী আসামি পুরো পুরি এসেছে কিনা আমার মনে হয় না।
আমরা খুনিদের বিচার সবাই চাই যেমন ১৫ আগষ্টের খুনি ছিল শুধু সেনা কর্মকর্তারা না মুশতাক গংরা তারা তো ছিল আওয়ামী লীগের একনিষ্ট তারা সবাই মুশতাকের কেবিনেটে মন্ত্রী হয়েছিল তারা কেউ বাদ যায় নাই সব বিশ্বাসঘাতক সেটা ভিন্ন প্রেক্ষাপট কিন্তু কথা হচ্ছে যে খুনিদের দুই একজনের ফাঁসি দিলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়মুক্তি হয়ে গেছে এটা আমরা মনে করি না।
কেনো দরকার ছিলো ৩ নভেম্বরে অভ্যুত্থান:
অনেকের ধারণা ৩ নভেম্বর কি দরকার ছিল। ৩ নভেম্বরের কারণেই জাতীয় চার নেতা হত্যার স্বীকার হয়েছে। না হলে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না। কিন্তু আমি বলবো ৩ নভেম্বরে অভ্যুথান না হতো তাহলে মুশতাকের টুপির রাজনীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতো। তার ড্রেস ছিরো টুপি আর প্রিন্সকোর্ট।
যারা ৩ নভেম্বরকে ব্লেম করে তারা জানেনা যে আমরা যদি ৩ নভেম্বর না করতাম তাহলে আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারতো না, আওয়ামী লীগের চিহৃ থাকতো না। প্রশ্নই উঠে না। আওয়ামী লীগ দাঁড়াতেই পারতো না। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আসুক সামনা সামনি বলবো আমরা ৩ নভেম্বর করেছি এর কারণে আওয়ামী লীগ টিকে আছে এটাই সত্য।
মুশতাক যদি আর তিন থেকে চার মাস কন্টিনিউ করতে পারতো তাহলে আওয়ামী লীগের যে ক’জন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ছিলেন বা বঙ্গবন্ধু যাদের ডিসট্রিক গভর্ণর করে পাঠিয়ে ছিলেন তাদের মুশতাকের কেবিনেটে যোগ দিতে বাধ্য করতেন যোগ দিতে রাজি না হলে মারা পড়তেন। মুশতাক তাদের জেলায় জেলায় গিয়ে গুলি করে মারতেন।
মুশতাক আরো দৃঢ় হয়ে যেতো তার কাছে কে আসতেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগ তাহলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস মুছে যেতো নতুনভাবে সব তৈরি করতো মুশতাক।
আমরা যেদিন বঙ্গভবনে ঢুকলাম মুশতাককে কিল করা করার জন্য কিল করতে পারি নাই সেটা অন্য কারণ। আমরা যখন ঢুকলাম ভিতরে তখন কেউ কেউ এসে আমাদের বাধা দিরো বলতে লাগলো জাফর ইমাম, গাফ্ফার, হাফিজ, ডন্ট কিল প্রেসিডেন্ট, ডন্ট কিল, ডন্ট কিল। আমি সেদিন প্রেসিডেন্ট মুশতাককে কলার ধরে প্রথমে টেনে হেচড়ে নামায়। পূর্বপশ্চিম
এমটিনিউজ/এসবি