শনিবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:৩৪:০৫

পেঁয়াজের সেঞ্চুরি!

পেঁয়াজের সেঞ্চুরি!

নিউজ ডেস্ক : মাসের প্রথম শুক্রবার হিসেবে অনেকেই আজ বাজারের ব্যাগ নিয়ে গেছেন বাজারে। গত কদিন থেকেই পেঁয়াজের অনেক ঝাঁজ পাওয়া যাচ্ছিল। তাই উৎসুক এক ক্রেতা জানতে চাইলেন আজ পেঁয়াজের দাম কত? বিক্রেতা বললেন ১০০ টাকা! রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানপাটে এমন খবর শুনে আজ অবাক হয়েছেন অনেকে।

শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার, ফকিরাপুল, শান্তিনগরের কয়েকটি খুচরা বাজার ও মুদি দোকানে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। এসব স্থানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা সানোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। তার ওপর পেঁয়াজ কেনার পর বস্তা বাছাই করলে আধা কেজি থেকে ১ কেজি পেঁয়াজ কমে যায়। পাশাপাশি যাতায়াত খরচ তো আছেই। ব্যবসা করতে হয় করি। যতবার পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ততবার কাস্টমারের সাথে ঝগড়া করতে হচ্ছে। শুনতে হচ্ছে নানান কথা।

মগবাজার এলাকায় করিম ট্রেজার্সের মুদি দোকানি করিম সরকার বলেন, পেঁয়াজ নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্য। প্রতিটি তরকারি রান্না করতে পেঁয়াজ লাগে। মুদি দোকানে সাধারণত কাস্টমাররা একসাথে ১ থেকে দেড় কেজির বেশি পেঁয়াজ কেনেন না। আমরা পাইকারি দোকান থেকে বেশি দামে কিনে থাকি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।

ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী ফাতেমা খান বলেন, পেঁয়াজ খুবই প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। যেমন ১ কেজি মাংস রান্নায় ২শ গ্রামের বেশি পেঁয়াজ লাগে। পাশাপাশি কয়েকটি তরকারি রান্না শেষে দেখা যায়, দিনে ১ কেজি পেঁয়াজ লেগে যায় ৬ জনের পরিবারে। কোরবানি ঈদের আগে চাহিদা বাড়ার কারণে দাম কয়েকদিন বেশি থাকলেও তা সহ্য করা যায়। কিন্তু এভাবে হঠাৎ দাম টানা বাড়তে থাকলে জীবন চলবে কীভাবে। চালের দাম বেশি, সবজির দাম বেশি, মাছের দাম বেশি মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে।

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়তে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও আজকের বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রহমত ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, মজুদ দেশি পেঁয়াজের পরিমাণ বেশ কম। তার ওপর চাহিদা বেশি। ভারতের ব্যবসায়ীরা দেশে বন্যার খবর জেনে দাম ধরে রেখেছে। তাদের দেশে পেঁয়াজ কম উৎপাদন হয়েছে অজুহাতে দাম ছাড়ছে না। এজন্য ভারত সরকারের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হলে দাম কমতে পারে। তবে নতুন মৌসুমের অল্প-স্বল্প পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে কিছুদিন পর। তখন কিছুটা কমতে পারে।

বাজারে এই দামের সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে। টিসিবির মূল্য তালিকায় দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭৫-৮৫ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দেখা গেছে।

এদিকে দেশের বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। সোমবার সচিবালয়ে এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার কথা ভাবছে বলে জানা যায়।

বৈঠক সূত্রে আরো জানা যায়, ভারতের বাইরে মিশর, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সভায় বলা হয়, বেশি মুনাফার আশায় অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করেছেন যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এজন্য মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসতে মনিটরিং ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার মনিটরিং করবে।

তবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান অবশ্য শুধু আমদানি সঙ্কটকেই দায়ী করেন না। বর্তমানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক বাজার সৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের হাত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, চালের বাজারে দাম বাড়ার পর পেঁয়াজের বাজারও এখন আগুন। দেশে প্রাকৃতিক সঙ্কটের কারণে আমদানি ঘাটতি থাকতে পারে। তার কারণে হয়তো একটু আধটু দাম বাড়বে। কিন্তু এতোটা মেনে নেয়া যায় না। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি এখন জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির পর ব্যবসায়ীরা সাহস পেয়ে গেছেন। তারা মনে করছেন, নতুন কোনো পণ্যের দাম বাড়ালেও বাজার সয়ে যাবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন করে কোনো সেল করা দরকার। তারা শুধু দর উঠানামার বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।-আরটিভি
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে