বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:২০:৫৮

রাজনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

রাজনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক বিষয় ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এ ধরনের প্রস্তাব দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস বার্নিকাট। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একাধিকবার এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এই ‘সব ক্ষেত্রে’র মধ্যে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ইস্যু রয়েছে কি না, বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে এমন প্রশ্ন রাখা হলে এর কোনো উত্তর না দিয়ে মন্ত্রী ওই প্রশ্নটি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে করতে বলেন। পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে ‘স্থিতিশীল’ এবং অর্থনৈতিকভাবে ‘গতিশীল’ দেখতে চায় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ দেশের পুলিশ বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া তার দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখছে। ভবিষ্যতে এ ইস্যুতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিফেনস বার্নিকাট দুজনই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি মাসের ২৩ তারিখ ওয়াশিংটনে টিকফার বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের বিষয় নিয়ে আজ আমাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’ ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। টিকফা বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ১১টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে, তাতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব টিকফায় উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। এ সময় বার্নিকাটের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব শর্ত পূরণ করার পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না- এ ব্যাপারে তার কোনো মন্তব্য আছে কি না। জবাবে বার্নিকাট বলেন, রাজনৈতিক কারণে এ সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকরা নিরাপদে থাকুক এবং বাংলাদেশ পোশাকশিল্পে আরও উন্নতি লাভ করুক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি অনেক কারখানা পরিদর্শন করেছি। সেখানে দেখেছি শ্রমিকরা খুব সুন্দর পরিবেশে কাজ করছে। তবে আমার জানামতে, আরও কিছু শর্ত হয়তো পূরণ করতে হতে পারে।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আরও কাজ করার আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জিএসপি ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আরও অনেক ইস্যু রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মেধাস্বত্ব ছাড় (ট্রিপস) সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। রপ্তানিমুখী এ শিল্পের বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশের এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই এমন ইঙ্গিত করে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানির মাত্র এক শতাংশ জিএসপি সুবিধা পায়। অর্থনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব খুব বেশি নয়। এর জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জিএসপি ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি লাভজনক না হলেও দেশের সুনামের প্রশ্নে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এ সুবিধা না পেলে টিকফার বৈঠক অর্থহীন বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। মেধাস্বত্ব ছাড় সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে দেশটির নীতিনির্ধারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থনের কারণে আমরা মেধাস্বত্ব ছাড় সুবিধা পেয়েছি। তাদের সমর্থন না পেলে এটি হতো না।’ আসন্ন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রাপ্য সুবিধা বাস্তবায়নেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।-বিডিপ্রতিদিন ১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে