বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২১:৩৬

মেয়েদের বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না

মেয়েদের বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: বাংলাদেশে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৭৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সেই ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত এই ফলে বাংলাদেশে মেয়েদের মধ্যে বালবিয়ের এ উচ্চহারকে 'অস্বাভাবিক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত দিনব্যাপী এক আলোচনা সভায় 'এশিয়া চাইল্ড ম্যারেজ ইনিশিয়েটিভ' শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোর‌্যাম ইন্টারন্যাশনাল গবেষণা জরিপটি পরিচালনা করে। এ প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ২ হাজার ৭৪২ জনের ওপর জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৭৯০, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৭১ ও পাকিস্তানে ১১৮১ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং তারা বিবাহিত তরুণ-তরুণী। জরিপে ১৫৮টি আংশিক লিখিত প্রশ্নে কমিউনিটি সদস্যের সাক্ষাৎকার ও ৪৭টি ফোকাস গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হার রয়েছে পাকিস্তানে। ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় পাকিস্তানে। ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ১৫ দশমিক ২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়। পাকিস্তানে ছেলেদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের হার ১৩ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া এ তিন দেশে বাল্যবিয়ের উচ্চহারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে :মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্ব্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক সুযোগ ও আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার অভাব এবং সেই সঙ্গে চরম দারিদ্র্য ও দুর্বল বিচার ব্যবস্থা। এতে আরও বলা হয়েছে, একটি জনগোষ্ঠীতে শিক্ষার হার, উপার্জন, অর্থনৈতিক সুযোগ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ এবং সামাজিকভাবে বাল্যবিয়েতে সমর্থন প্রদানের প্রবণতা_ এসবের মধ্যে সরাসরি সংযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে। উলি্লখিত সুযোগগুলো প্রাপ্তির হার বৃদ্ধি পেলে তা বাল্যবিয়ের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করে। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোইত-পিয়ারে লারামি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিস আর্জেন্টিনা পিন্টো মাতাভেল পিছিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সেনাইৎ গ্যাব্রিজিবার । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ইতিমধ্যে বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনতে নান পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় যে দুটি বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে তা হলো পথশিশুদের পুনর্বাসন ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া। সরকার দ্রুতই চাইল্ড ম্যারেজ রেস্ট্রেইন্ট অ্যাক্ট প্রণয়ন করবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে ১৫ বছরের নিচে মেয়েশিশুর বিয়ে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজজীবনে একটা অভিশাপ। আজকের এই গবেষণা প্রতিবেদন নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে গবেষণায় পশ্চিমা প্রভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গবেষণার নামে কোনো কিছুকে চাপিয়ে দিলে হবে না। তাহলে সেটা আমাদের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথকে আরও কণ্টকাকীর্ণ করে তুলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষাকে সব সামাজিক রোগ নিরাময়ের মহা-ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে বাল্যবিয়েসহ সমাজের সব ব্যাধি দূর করা সম্ভব হবে। গবেষণা প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, তিনটি দেশেই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সরকার এবং প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি-সমাজ-পারিবারের সঙ্গতিপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি হস্তক্ষেপ বাল্যবিয়ের গ্রহণযোগ্যতার মাত্রায় একটি ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ৪০টি জোরালো ও বাস্তবধর্মী পরামর্শের মাধ্যমে প্রতিবেদনের ইতি টানা হয়েছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মার্ক পিয়ার্স বলেন, সমাজে বিরাজমান বাল্যবিয়ের পেছনে রয়েছে গভীরভাবে বদ্ধমূল লিঙ্গবৈষম্য। কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়, মেয়েদের আর্থিক স্বনির্ভরতা এবং সামাজিক প্রথাও বাল্যবিয়ের ঘটনায় শক্ত ভূমিকা রাখে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নয়ন অংশীদারসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।-সমকাল ১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে