বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:১২:৫৫

বিমানবন্দরে ব্রিটিশ গোয়েন্দা

বিমানবন্দরে ব্রিটিশ গোয়েন্দা

মুজিব মাসুদ: হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে ব্রিটিশ এভিয়েশন গোয়েন্দাদের একটি দল। তারা বিমানবন্দরের প্রবেশ পথ, স্ক্যানিং ব্যবস্থা, ইমিগ্রেশন সিস্টেম, ডগ স্কোয়াডের দক্ষতা, কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। দলটি স্ক্যানিং মেশিন অপারেটরদের দক্ষতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। নিরাপত্তা স্ক্যানিংয়ের ওপর তাদের অধিকতর প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়। এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার জন্যই দলটি ঢাকায় এসেছে। এর সঙ্গে তাদের দেশের নিরাপত্তাও জড়িত। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানে চারটি ফ্লাইট সরাসরি লন্ডন যায়। এছাড়াও কিছু এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটও ঢাকা হয়ে যাতায়াত করে। এসবের সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জড়িত। তারা বিমান মন্ত্রণালয়ের অনুমোতি নিয়েই শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন। জানা গেছে, মিসরে বিমান দুর্ঘটনার পর এ অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করেছে ব্রিটিশ সরকার। এ লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করছেন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দলটি। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট বিভাগের রিজওনাল এভিয়েশন সেক্রোটারি ও লিয়াজোঁ অফিসার এশিয়া অ্যান্ড প্যাসেফিক জন লোভেসির নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শনের কাজটি করছে। দলের অপর সদস্য হলেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) স্টেভেন ডটস। এ সময় পরিচালক শাহজালাল বিমানবন্দর, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড, এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যসহ সিভিল এভিয়েশন ও রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশন দু-একদিন আগেই বিমানবন্দর পরিদর্শনের বিষয়টি পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। মঙ্গলবার সকালেই মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো বিমানবন্দর ও বিমানের নিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের চারদিকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে । এ প্রসঙ্গে জানতে ব্রিটিশ এভিয়েশন গোয়েন্দা দলের প্রধান জন লোভেসির কাছে মেইল বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) তিনি কোনো উত্তর দেননি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা দলটি বিমানবন্দরের চারদিকে নিরাপত্তা চৌকিগুলো ঘুরে দেখেছে। তবে এ সময় চৌকিগুলোতে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না । স্পর্শকাতর এলাকায় তারা গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ দেখেছেন। একই সময় নিরাপত্তা প্রাচীর টপকে গ্রামবাসীকে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতেও দেখেন তারা। এর আগে দুপুরের দিকে দুই সদস্যের এ প্রতিনিধি দল শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে। প্রথমেই তারা বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের বহির্গমন লাউঞ্জে আসে। সেখানে লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, যাত্রীদের তল্লাশির ব্যবস্থা, ইমিগ্রেশন পদ্ধতি ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখেন। কর্তব্যরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য, পুলিশ, আনসার, সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা গার্ড ও এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। ডিউটি ফ্রি শপসহ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও ঘুরে দেখেন। বিমানবন্দরে কর্মরত সদস্যদের নিরাপত্তা পাসও খতিয়ে দেখেন। একটি লাগেজ তিনভাবে স্ক্যানিং মেশিনে দিয়ে এর ফল জানতে চান সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের কাছে। যথাযথ উত্তর না পেয়ে তাদের হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। এরপর তারা বিমানবন্দরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা ৮ নম্বর গেটে যান। দীর্ঘ সময় ওই গেটে অবস্থান করেন। কীভাবে মানুষজন ও যানবাহন বিমানবন্দরে প্রবেশ করছে ও বের হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করেন। ওই গেটের স্ক্যানিং মেশিনটিও নানাভাবে পরীক্ষা করেন এবং সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা যান বিমানের কার্গো ভিলেজে। সেখানে তারা দীর্ঘ সময় অবস্থান করে বিদেশে কার্গো পাঠানোর বিষয় খতিয়ে দেখেন। ব্রিটিশ দল কার্গো পণ্য স্ক্যানিং পদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তর্জাতিকমানের আরও ট্রেনিং দেয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে ডগ স্কোয়াডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা মজবুত, তা পরখ করে দেখেন। পরিদর্শন শেষে দলটি সিভিল এভিয়েশন সদর দফতরের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন দেখেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে সম্মত হননি দলটির সদস্যরা। সরেজমিন পরিদর্শনের সামগ্রিক বিষয় পরবর্তী সময়ে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেও নিশ্চিত করে গেছেন। সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দর এলাকায় হেলিকপ্টারের সিমিউলেটর ট্রেনিং করা হবে। সে কারণে প্রতিনিধি দলটি শাহজালালের চারপাশের অবস্থা দেখতে এসেছে। এর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই। খবর পেয়ে শাহজালালে পৌঁছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরীসহ সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারাও বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। জানা গেছে, কিছুদিন ধরে নাশকতার আশংকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে র‌্যাব ও বিজিবির ডগ স্কোয়াড। বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া যাত্রীদের তল্লাশির ক্ষেত্রেও আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। পুলিশ বলছে নাশকতার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই কড়াকড়ি অবস্থা চলছে। বিমানবন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি দু’জন বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং আশুরা সমাবেশে হামলার প্রেক্ষাপটে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।-যুগান্তর ১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে