অবৈধ পাকিস্তানিদের ধরতে অভিযান শুরু
সৈয়দ আতিক: বাংলাদেশে থাকা অবৈধ পাকিস্তানিদের গ্রেফতারে কঠোর অভিযান শুরু করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অবৈধ এসব পাকিস্তানি ট্যুরিস্ট বা মাল্টিপল ভিসায় বাংলাদেশে এসে আর ফিরে যায়নি। এদের অনেকে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে চালাচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রম। একই সঙ্গে এসব নাগরিক হুন্ডি ব্যবসা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ ও মাদকের ব্যবসার জন্য ঢাকাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ৩৬ জন পাকিস্তানি ব্যবসায়ীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি মালিকানাধীন ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে গত তিন দিনে ঢাকায় এ ধরনের চারটি প্রতিষ্ঠানে অভিযানও চালিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাকিস্তানিদের তথ্যও নেয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পাকিস্তানিদের মধ্যে কেউ বেসরকারি এনজিও বা কোনো প্রকল্পের কাজে এসে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলে হামলা, ব্লগার খুন ও একাধিক প্রকাশকের ওপর হামলা এবং কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই পুলিশ হত্যার ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা এবং এসব ঘটনার সবগুলোর পর কথিত আইএসের দাবির পরই এ অভিযান শুরু হল।
যে চারটি প্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হল- এলিফেন্ট রোডের সুবাস্তু অ্যারোমা সেন্টার, ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজা ও গুলশানের পিংকসিটিতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানায় আইনশৃংখলা বাহিনী।
এছাড়া নজরদারিতে রয়েছেন পল্টনের একটি মার্কেটের ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লা, সুবাস্তু অ্যারোমা সেন্টারের ‘শারেফ কিয়ানী’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক সাহজাদ কিয়ানী ও তার ভাই কাজ্জাফি সাদ্দাম কিয়ানী।
এছাড়া লাখানী কালেকশনের জোনায়েদ আহমেদ, প্রিন্স প্লাজার ব্যবসায়ী গুলজার শিবলী, নেজাম, ইউসুফ ও শহীদ শরিফ, গুলশানের পিংকসিটির কামরান জি, কাপড় ব্যবসায়ী হালিমপুরী ও কালিমপুরীও আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল টেলিফোনে বলেন, পাকিস্তানের যেসব নাগরিক অবৈধভাবে এ দেশে রয়েছে তাদের ধরতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব পাক-নাগরিক নানা অপরাধে জড়িত। তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যোগসূত্র রয়েছে।
আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্র জানায়, বৈধ পাকিস্তানিদের সঙ্গে অনেক অবৈধ পাকিস্তানি বাংলাদেশে বসবাস করছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে বৈধভাবে বসবাসকারী পাকিস্তানির সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানির সংখ্যা এর কয়েকগুণ। এদের কেউ কেউ জঙ্গি কার্যক্রম, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে। জঙ্গিদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন কেউ কেউ।
সূত্র জানায়, এরা বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে নিম্ন মানের ওষুধ, ভ্রুণ নষ্টকারী ওষুধ, নিম্ন মানের ভল্টারিন, ওলিভা, গার্নিয়ার ও নিউ ট্যাজিনার কসমেটিকস, টেক্সটাইল পার্টস, মেশিনারিজ, মার্বেল সামগ্রী এবং ফার্নিচার এনে বিক্রি করছে। এসবের আড়ালে চালাচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রম।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ পাকিস্তানিরা এ দেশে অবস্থান করে নানা ধরনের অপরাধ করছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দারা কঠোর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি এদের সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও যোগসূত্রগুলো খতিয়ে দেখে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও লস্কর-ই-তৈয়বার কয়েকজন জঙ্গি ধরা পড়েছিল। যারা ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে ঘনঘন বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। এ ধরনের অবৈধ পাক-নাগরিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তাই তাদের গ্রেফতারে কঠোর হচ্ছেন তারা।
চলতি সপ্তাহেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয় চার পাকিস্তানি- ইদ্রিস আলী, শাকিল, খলিলুর ও ইকবাল। এদের কাছে জঙ্গি কার্যক্রমের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডিবি সূত্র জানায়, এরা ঢাকায় জাল রুপি ও জাল মুদ্রার বাণিজ্য করে আসছে। তাদের সঙ্গে এ দেশের জঙ্গিদের যোগসূত্র রয়েছে।-যুগান্তর
১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি