বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৫৭:৫৭

পাথর সংকটে বন্ধের পথে সড়ক-সেতু নির্মাণকাজ

পাথর সংকটে বন্ধের পথে সড়ক-সেতু নির্মাণকাজ

ইসমাইল আলী: ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ১৫১ কিলোমিটারে মাটির কাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে পাথরের অভাবে আটকে আছে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বিটুমিনের কাজ। একই কারণে ঝুলে আছে প্রকল্পটির ফেনী ওভারপাসের পাইলিংও। এছাড়া কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম ওভারপাসের পাইলিং সম্পন্ন হলেও বন্ধ রাখা হয়েছে উপরিভাগের (সুপারস্ট্রাকচার) কাজ। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের। পাথর সংকটে ঝুলে আছে প্রকল্পটির ১১ কিলোমিটার বিটুমিনের কাজ। নির্মাণ করা যায়নি ওই অংশের একটি কালভার্টও। এছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত আট লেন প্রকল্পের আধা কিলোমিটারের কাজও বন্ধ পাথরের অভাবে। সব মিলিয়ে পাথর সংকটে বন্ধের পথে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের বিভিন্ন সড়ক ও সেতু নির্মাণকাজ। জানা গেছে, আইনগত জটিলতায় কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে পাথর রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারত। আর স্তর নেমে যাওয়ায় সিলেটের জাফলং ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকেও পাথর সরবরাহ প্রায় বন্ধ। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনসহ চলতি অর্থবছর সংস্থাটির সম্ভাব্য সমাপ্য ২৬টি প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সূত্রমতে, সংকট নিরসনে সিলেটের সার্কিট হাউজে ৬ নভেম্বর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক। যদিও পাথর সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি বৈঠক থেকে। বৈঠকে সড়ক বিভাগের সচিব জানান, মাঠ পর্যায়ে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পিক সময় নভেম্বর থেকে মার্চ। এ সময় স্থানীয় কোয়ারিগুলো থেকে পাথর ও বালি তোলা হয়, যা সরবরাহ করা হয় সারা বছর। তবে নিজস্ব কোয়ারি থেকে পাথর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আর উচ্চ আদালতে মামলার কারণে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্য থেকেও পাথর রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে পাথরনির্ভর অবকাঠামোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহূত পাথরের ৭০-৮০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। ফলে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সমস্যা বাড়ছে। তবে ভারতের ব্যবসায়ীরাও সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। কারণ আসাম ও মেঘালয়ের পাথর বাংলাদেশে রফতানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে উভয় পক্ষ। সওজের তথ্যমতে, পাথরের অভাবে শেষ হওয়ার পর্যায়ে থাকা প্রকল্পগুলোয় গতি আসছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মাত্র ৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে সওজের বিভিন্ন প্রকল্পের। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্পের কোনো অগ্রগতিই নেই। এমএএন ছিদ্দিক বলেন, পাথর সংকটে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ভারতের আদালতের মামলা নিষ্পত্তির পথে রয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত পাথর আমদানি শুরু করা যাবে। তবে সমস্যা সমাধান না হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোচরীভূত করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধের পাশাপাশি ভোলাগঞ্জ ও জাফলংয়ের কোয়ারিগুলোয়ও পাথরের স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০-৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে বিদ্যমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাথর আহরণ করা যাচ্ছে না। এজন্য যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হলেও উচ্চ আদালতে মামলা করে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা। ফলে আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে পাথর উত্তোলন। বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানে বৈঠকে সুপারিশ করেন জাফলংয়ের পাথর ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু। জৈন্তা উপজেলার ক্রাশার প্লান্ট মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, ভারতের পিয়াইন, ডাউকি ও ধলাই নদীর উজান থেকে বর্ষা মৌসুমে মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকার পাথর গড়িয়ে জাফলং ও ভোলাগঞ্জে আসত। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের শেষ প্রান্তে নদীগুলোর নো-ম্যানস-ল্যান্ডসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় চওড়া পাথরের চর সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাধা পেয়ে পাথর গড়িয়ে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সংকটে পড়েছে ভোলাগঞ্জ ও জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিগুলো। এক্ষেত্রে ভারতের অংশে গড়ে ওঠা চর অপসারণে সরকারের উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। সমস্যা সমাধানে সীমান্ত রেখার ১৫০ গজের বাইরে শর্তসাপেক্ষে খননকাজ পরিচালনার অনুমতি দেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বিজিবি কমান্ডার মেজর লুত্ফর রহমান। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর পাথরের স্তূপ অপসারণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণেরও প্রস্তাব করেন তিনি। সওজের তথ্যমতে, গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পের কাজ ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ সমাপ্ত হয়ে আছে। তবে পাথরের অভাবে বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক নির্মাণ, পিরোজপুর-গোলাপগঞ্জ সেতু (পাটগতি সেতু) নির্মাণ, শিরনীরটেক-গাবতলী সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বানিয়াচং-নবীগঞ্জ সড়ক, রায়পুরা-নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়ক নির্মাণ, লেবুখালী-গলাচিপা-আমড়াগাছী সড়ক পুনর্নির্মাণ, গফরগাঁও-মাওনা সড়কে ত্রিমোহনী সেতু নির্মাণ, চরফ্যাশন-বাবুরহাট লঞ্চঘাট সড়ক নির্মাণ, হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কে আটটি সেতু ও দুটি কালভার্ট নির্মাণ, বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম সড়কে সাতটি সেতু পুনর্নির্মাণ এবং জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।-বনিক বার্তা ১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে