বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:৩৯:৩১

চলে গেলেন বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মুফতি আবদুর রহমান

চলে গেলেন বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মুফতি আবদুর রহমান

নিউজ ডেস্ক : মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন মুফতি আবদুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মরহুমের নামাজে জানাযা আজ বুধবার সকাল ১০টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে বসুন্ধরা নতুন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। মুফতি আব্দুর রহমান বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার অগণিত ভক্ত রয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।হাজারো ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্তাবধানে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতি ও ইসলামী ব্যাংকিংয়ে প্রধানতম তাত্ত্বিকদের একজন ছিলেন মুফতি আবদুর রহমান।এ সংক্রান্ত তার গবেষণা ও মতামত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ইমামনগর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম চাঁন মিয়া। তিনি নাজিরহাট ও হাটহাজারি মাদ্রাসায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়ন শেষে দারুল উলুম দেওবন্দে গিয়ে ১৯৫০ সালে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসে উত্তীর্ণ হন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের প্রথম ডিগ্রি লাভকারী মুফতি। দেশে ফিরে তিনি আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হকের (রহ.)আহবানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তার কর্ম জীবনের শুরু করেন। মুফতি আবদুর রহমন ১৯৬২ সালে উত্তরবঙ্গ সফর করেন। সেখানে জনসাধারণকে নিয়ে বহু মসজিদ ও মাদরাসা, মক্তব ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্যোগে আল জামিয়া কাসেমুল উলুম জামীল মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মৃত্যুর আগে তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সহস্রাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ (উত্তরবঙ্গ) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সুদীর্ঘ ছয় বছরের মিশন শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি আল জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে সর্বোচ্চ কিতাব বোখারি শরিফের ১ম খণ্ডের পাঠদান করেন। আল জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক থাকাকালে তিনি দেশব্যাপি একশ’ সদস্য বিশিষ্ট ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় তিনি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। তিনি সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। আরব বিশ্ব তথা দুবাই, বাহরাইন, কাতার ইত্যাদি রাষ্ট্র এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বড় বড় ইসলামি অর্থনৈতিক সেমিনারে তিনি যোগ দেন। এসব সেমিনারে ইসলামি অর্থনীতির উপর তার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ খুবই সমাদৃত হয়। ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় তিনিই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ইসলামি অর্থনীতি ও ইসলামি ব্যাংকিং বিভাগ চালু করেন। ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থনীতিকে এদেশের আলেম, ওলামা ও মাদরাসা পড়ুয়াদের মধ্যে বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও আয়োজন করেন তিনি। তার উদ্যোগে ২০০২ সালে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকাতে পক্ষকালব্যাপি এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে ১৫ দিন ব্যাপি এক অর্থনৈতিক কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করেন তিনি। এ কর্মশালা ও সেমিনার বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বহুদুর এগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তাদের উৎসাহ ব্যাপকভাবেই বৃদ্ধি পায়। হযরত ফকিহুল মিল্লাত আমৃত্যু আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হন।দীর্ঘদিন তিনি সেন্ট্রাল শরীয়া বোর্ড ইসলামিক ব্যাংকস-এর ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে হযরত ফকিহুল মিল্লাত আধ্যাত্মিক জ্ঞানে পরিপূর্ণতার দিকে মনোনিবেশ করেন। খুব কম সময়ে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সকল স্তর অতিক্রম করে যুগ শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ পীরে কামেল শাহ আবরারুল হক সাহেব (রহ.) হতে খেলাফতপ্রাপ্ত হন। ১৯৯১ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চ শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম দেন মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী। এটি বর্তমানে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। ২০০৪ সালে তিনি বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় জামিআতুল আবরার নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ফকিহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তার একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে