বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:০৭:৩৭

এবার দুর্বৃত্তদের টার্গেটে যারা

এবার দুর্বৃত্তদের টার্গেটে যারা

ঢাকা: গতকয়েক দিনে ব্লগার, পুলিশ, মিলিটারি পুলিশ হত্যার পরে, এবার দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পরিণত হলো কারারক্ষীরা। ইউনিফর্ম পরে বাইরে বের হলে দুর্বৃত্তদের হামলার আশঙ্কাও করা হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। সেকারণে কারারক্ষীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে ফরিদপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছে এক কারারক্ষী। ইতিপূর্বে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, হোসনি দালানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, বুধবার দুপুরে ফরিদপুরে মামলার নথিপত্র আদালতে নেওয়ার সময় আসাদুজ্জামান নামে এক কারারক্ষীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। যদিও ফদিরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভিন্নভাবে। বলেছেন, কারারক্ষী মোটরসাইলের পেছন থেকে পড়ে আহত হয়েছেন। অপর দিকে বুধবার বিকেলে কারা অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কারামহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দীন বলেছেন, দুইজন কারারক্ষী ফরিদপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মোটরসাইকেলযোগে ডাকঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে ক্ষুর ছুড়লে এক কারারক্ষী আহত হন। তাঁর নাম আসাদুজ্জামান। তিনি আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকধারী সদস্যদের ওপর হামলা হচ্ছে। আজকের ঘটনার পর তিনি নির্দেশ দেন, কারাগারের বাইরে কোনো কাজ থাকলে ইউনিফর্ম না পরে সাদা পোশাকে কাজে যেতে। আর কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার কাফরুলে মিলিটারি পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা আর ফরিদপুরে কারারক্ষীর ওপর হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্লগার লেখক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ও নিহতের ঘটনার পর কারারক্ষীদের ওপর হামলা হতে পরে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এজন্য সারাদেশের কারারক্ষীদের পোষাক পরে বাহিরে ঘোরাফেরা না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরে কারারক্ষী আহত হওয়ার আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর কচুক্ষেতে এমপি চেকপোস্টে মিলিটারি পুলিশের এক সদস্যকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। মিলিটারি পুলিশ সদস্যের নাম সামিদুল ইসলাম। তিনি ১৩ এমপির ল্যান্স কর্পোরাল। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। র‌্যাব ও মিলিটারি পুলিশ ঘটনাস্থ ঘিরে তদন্ত শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সূত্রে জানা যায়, কচুক্ষেতের ওই সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তারপরও সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এমপি তল্লাশিচৌকির সামনে দিয়ে একটি রিকশা সোজা দক্ষিণ দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় মিলিটারি পুলিশের ল্যান্স কর্পোরাল সামিদুল রিকশাটিকে থামায়। এরপর ওই রিকশার চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক যুবক পেছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এসময় তার বাম ঘাড়ে ও চোয়ালে আঘাত করতে থাকে। তিনি তাকে বাধা দিতে গেলে তার হাতেও আঘাত প্রাপ্ত হয়। এই হামলার ঘটনাটি তল্লাশিচৌকির অন্য সদস্য ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেখতে পান। পরে তারা এগিয়ে আসলে ওই যুবক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে তার পেছনে ধাওয়া করে উত্তর কাফরুলের ২৩৯/১/খ বাসার পাঁচতলা থেকে তাকে আটক করা হয়। এরআগে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে জামালপুর সরিষাবাড়ি উপজেলায় পুলিশের এসআই আবু সাঈদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয়রা। একইদিনে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ডাকাতের হামলায় ট্রাফিক পুলিশ আহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মাধবপুরের আদাউর এলাকায় পুলিশের ওপর ডাকাতের হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো: বায়েজিদসহ কয়েকজন আহত হন। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে মাধবপুরের একটি মাজারের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফেরার পথে আদাউর এলাকায় ১৫/১৬ জনের একটি ডাকাতদল তাদের মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে ডাকাতরা তাদের মাইক্রোবাসে হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপিয়ে আহত করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে মাধবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। তার আগে নিরাপত্তা চৌকিতে (চেকপোস্ট) দুর্বৃত্তদের হামলায় গত বুধবার সকাল পৌনে আটটার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মুকুল হোসেন নামে পুলিশ সদস্য নিহত হন। গুরুতর আহত আরেক পুলিশ সদস্য নূর আলম সিদ্দিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘাটুরা এলাকায় পুলিশের পিকআপ ভ্যানে গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের প্রাইভেট কারটি ধাওয়া করতে গিয়ে পিকআপ ভ্যান খাদে পড়ে আহত হয়েছে চার পুলিশ সদস্য। তার আগে রাজধানীর গাবতলীতে তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে পুলিশের এক এএসআই নিহত হন। সাভারের আশুলিয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। একইসঙ্গে নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ ও র‌্যাবের নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। সাভারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, গত কয়েক মাসে ব্লগার-প্রকাশকদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, পুলিশের ওপর এই হামলা হয়েছে একই কায়দায়। আশুলিয়ার ঘটনা নিয়ে গত এক মাসের ব্যবধানে দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হলেন ৩ পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তা চৌকিতে পুলিশকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা, আগুন লাগিয়ে দেয়া ও গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় ‘স্থাপন করা নিরাপত্তা চৌকি’তেই নিরাপত্তাহীন পুলিশ। এ বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছেন তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ আপনার আপনার সন্তান বা বাবা যাই লাগুক তাদের হত্যার পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কোন স্বার্থ হাসিল করতে পারবেন না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ঘটনাটিকে পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সবাই প্রশিক্ষিত। তিনি ধারণা করছেন, গাবতলীতে পুলিশের ওপর হামলা ও বাড়ইপাড়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। অপর দিকে বুধবার বিকেলে বকশীবাজারস্থ কারা অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজি প্রিজন বলেছেন, ফরিদপুরে কারারক্ষীর ওপর হামলা ও কাফরুলে মিলিটারি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। ফরিদপুরের কারারক্ষীর ওপর হামলার ঘটনার পর দেশের সকল কারারক্ষীদের তাদের ডিউটি শেষে পোষাক পরে বাহিরে ঘোরাফেরা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার উদ্দিন বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা এখনো আমরা পাইনি। প্রসঙ্গত, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও গতকয়েক দিনে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর কারাগারসহ দেশের সব কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ১২ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে