সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি দেখছে যুক্তরাষ্ট্র
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে 'ভ্রমণ পরামর্শ' (ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি) দিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র এবার তার চেয়ে আরো উচ্চমাত্রার 'ভ্রমণ সতর্কতা' (ট্রাভেল অ্যালার্ট) জারি করেছে। বাংলাদেশে চলমান উগ্রবাদী হামলা অব্যাহত থাকার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগের কথা যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের জানাতে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ওই সতর্কতা জারি করে। 'ভ্রমণ না করার পরামর্শে'র (ট্রাভেল ওয়ার্নিংয়ের) আগে এটিই সর্বোচ্চ ঝুঁকি সূচক।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে বিদেশিদের বড় জনসমাগমসহ বিদেশিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে কূটনৈতিক জোনের কাছে ইতালির একজন নাগরিককে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের 'ভ্রমণ পরামর্শ' দেয়। পরে জাপানি নাগরিক হত্যাসহ বিভিন্ন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই পরামর্শ বহাল থাকার কথাই ওই দেশটির দূতাবাসের নিরাপত্তা বার্তাগুলোতে বলা হচ্ছিল।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দেশটি তার নাগরিকদের জন্য ৩৯টি দেশ সফরের বিষয়ে 'ট্রাভেল ওয়ার্নিং' দিয়েছে। সাধারণত অস্থিতিশীল সরকার, গৃহযুদ্ধ, ভয়াবহ অপরাধ বা সহিংসতা অব্যাহত থাকা কিংবা প্রায়ই সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে 'ট্রাভেল ওয়ার্নিং' দিয়ে আমেরিকানদের সে দেশে না যেতে জোরালোভাবে উৎসাহিত করা হয়। এর চেয়ে তুলনামূলক কম মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ সূচক 'ট্রাভেল অ্যালার্ট' দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ট্রাভেল অ্যালার্ট সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয়। কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি দৃশ্যমান হওয়া, সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, নির্বাচনের সময় বা ঘন ঘন হরতাল, মিছিল বা গোলমেলে পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাভেল অ্যালার্ট জারি করে থাকে। ঝুঁকি কেটে গেছে বা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মনে করলে ওই অ্যালার্ট বাতিল করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে বলেছে, 'সাম্প্রতিক সহিংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন ও উচ্চমাত্রায় সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার নাগরিক কোনো ধরনের অঘটনের শিকার হওয়া ছাড়াই প্রতিবছর বাংলাদেশ সফর করে, তবুও বাংলাদেশে বসবাসকারী বা সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।'
বাংলাদেশ বিষয়ে ট্রাভেল অ্যালার্টে বলা হয়েছে, 'বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া যায়, বিদেশি বড় সমাগমসহ বাংলাদেশে বিদেশিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। গত সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদেশি ব্যক্তিবিশেষ ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালির, ৩ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হত্যা ও ২৪ অক্টোবর শিয়া মুসলমানদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায় বোমা হামলা অন্যতম। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভেন্ত (আইএসআইএল) প্রকাশ্যে ওই তিন হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্লগারকে হত্যার ঘটনাসহ ২০১৫ সালজুড়ে লেখক, প্রকাশক ও গণমাধ্যমের অন্যদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হুমকি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পর্যবেক্ষণ হলো, সন্ত্রাসের ঝুঁকি এখন বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য এবং আরো হামলা হতে পারে।
পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, 'বাংলাদেশে বসবাসরত বা সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন ও স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তারা কোনো অঘটন ছাড়াই দাপ্তরিক কাজ অব্যাহত রাখলেও দূতাবাস তাঁদের ব্যক্তিগত চলাফেরার ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগ প্রকাশ্য স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের ফুটপাত ব্যবহার বা হাঁটা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা কিংবা খোলা যানবাহনে চড়তেও নিষেধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক হোটেলে অনুষ্ঠানসহ বড় জনসমাগমে তাঁদের যোগ দেওয়ার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের অনুরূপ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করছে।'
এ-সংক্রান্ত আরো তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ভ্রমণ পরামর্শ তথ্য, নিরাপত্তা বার্তা পাওয়ার জন্য স্মার্ট ট্রাভেলার এনরোলমেন্ট প্রোগ্রামে (এসটিইপি) নিবন্ধন, ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ বা দূতাবাসের টুইটার ও ফেসবুক বার্তা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।-কালের কণ্ঠ
১২ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি