বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:২৭:০৬

পৌর নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছেন এরশাদ

পৌর নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছেন এরশাদ

নিউজ ডেস্ক: পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে একক কর্তৃত্বে দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়ভাবে পার্টির তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের জাপা চেয়ারম্যান সরাসরি এ মনোনয়ন দেবেন। পার্টির বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে ৩ নভেম্বর পার্টির চেয়ারম্যান চিঠি দিয়ে সারাদেশের জেলা ও উপজেলা দায়িত্বশীল নেতাদের পৌরসভা নির্বাচনের জন্য যোগ্যপ্রার্থী ঠিক করতে নির্দেশ দেন। একই চিঠিতে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের নাম চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর জন্য জানানো হয়। এই নির্দেশ পাওয়ার পর তৃণমূলের নেতারা তালিকা প্রস্তুতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন তথ্য জানান দলটির বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলেন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতাদের মধ্যে চলছে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিযোগিতা। অন্য একটি সূত্র জানায়, সব পৌরসভায় একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। প্রার্থীদের দলে অতীতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও বর্তমানে অবস্থান কোন পর্যায় রয়েছে তা বিবেচনা করে প্রত্যেক পৌরসভায় একজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবেন এরশাদ। যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে বাকিদের কাজ করতে অনুরোধ জানাবেন এমন কথাও জানান এ সূত্রটি। অপরদিকে পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ থাকছেন না নির্বাচনের কোনো ধরনের কার্যক্রমে। পার্টির বেশ কয়েক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ তথ্য জানিয়ে বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে পার্টির সব সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান একক ক্ষমতাবলে তা করতে পারবেন। সে কারণে এরশাদ এবারের পৌরসভা নির্বাচনের মনোনয়ন একক নিয়ন্ত্রণে দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, দলে যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জাপা সূত্রে জানা গেছে, পার্টির নির্বাচিত ৩৪ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৬ এমপিসহ মোট ৪০ জন রয়েছেন। প্রত্যেক এমপি নিজ নিজ জেলা আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ঠিক করতে পারেন। এতে দলের লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। ত্যাগী নেতারা বাদও যেতে পারেন। এ আশঙ্কায় থেকে বেগম রওশন ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, একমন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীকে বাদ রেখেই নির্বাচনী মনিটরিং কমিটি করেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। যাতে করে জেলা ও উপজেলা নেতারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেন। শুধু দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সঙ্গে রেখে জাপার প্রার্থীদের তালিকা করা হচ্ছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ পার্টির মহাসচিব বাবলুর ওপরও নজরদারি রাখবেন। কোনো প্রকার সাংগঠনিক নিয়মের বাইরে স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, অর্থের বিনিময়ে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন দেয়ার জন্য জোর সুপারিশ করেন কি না ইত্যাদি বিষয়ও দেখবেন। যদি এসব কিছুর মধ্যে বাবলু জড়িত থাকেন তাহলে তাকেও কারণ দর্শানের নোটিশ দেয়া হতে পারে। এ তথ্য জানিয়েছেন এরশাদের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র। সূত্র বলেন, অতীতের মহসচিব ও বর্তমান মহাসচিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্থের বিনিময়ে জেলা কমিটি দেয়া, মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এরশাদের টেবিলে। সবকিছু বিবেচনা করে জাপা চেয়ারম্যান এবারের পৌরসভার দলীয় মনোনয়ন নিজেই ঠিক করবেন। অন্যদিকে সারাদেশে জাপার মেয়াত্তীর্ণ কমিটির বাইরে প্রায় ৪৫ জেলায় সাংগঠনিক কমিটি গঠন হয়েছে। যেসব স্থানে জাপার প্রভাব ও দলীয় নেতাকর্মী পর্যাপ্ত রয়েছে সেসব স্থানে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বাকিগুলোতে সাংগঠনিক নিয়ম রক্ষার জন্য প্রার্থী দেয়া হবে। আর যেসব স্থানে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব পৌরসভায় দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা ও ভোট প্রার্থনার জন্য কেন্দ্র থেকে একটি শক্তিশালী টিম পাঠানো হবে। এ টিমের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার (সমবায়) প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, এসএম ফয়সল চিশতী ও সুনীল শুভরায়। এছাড়া আরো একটি নির্বাচন উপ-কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ সদস্য বলেন, ত্যাগী নেতাদের বিজয়ী করার জন্য এরশাদ নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। কমিটি গঠনের ব্যাপারে এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গত এক সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবন, জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় এবং পার্টির মহাসচিবের গুলশানের বাসভবনে সকাল থেকে ভিড় করেছেন। পার্টির মহাসচিব দেশে না থাকায় তৃণমূলের নেতারা সরাসরি পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর জাপার একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। তারা বলেন, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে অনেকে গত কয়েকদিনে এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের মনের কথা জানান। অনেকে এরশাদের সঙ্গে দেখা করে খুশি হয়েছেন বলে জানান জাপার এক শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাদের মনের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন এরশাদ। দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ১২ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে