শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৫৮:১৯

অসত্যের প্রতি আসক্তি : গোলাম মোর্তোজা

অসত্যের প্রতি আসক্তি : গোলাম মোর্তোজা

গোলাম মোর্তোজা : তথ্য গোপন, নাটক বা লুকোচুরিতে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র আসক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দের উৎস খুঁজে পান নীতিনির্ধারকরা। উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে নিয়ে যা ঘটল তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ- ১. ভারতীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করে সংবাদ দিল বাংলাদেশ অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনমানুষ সংবাদটি প্রথম জানল ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে। বিষয়টি জানার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন দেশের গণমাধ্যম কর্মীরা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা স্বীকারই করলেন না যে, অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২. ১১ নভেম্বর বুধবার দুপুর ২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করলেন, অনুপ চেটিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালেই নিশ্চিত করেছে গভীর রাতে অনুপ চেটিয়াকে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৩. অনুপ চেটিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৭ সালে। তারপর তিনি বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ তাতে সাড়া দেয়নি। অনুপ চেটিয়া উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। উলফার এবং ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়েছেন। এত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষকে ছেড়ে দেয়া হলো, তিনি নিজে নিজে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেলেন? তার কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন হলো না? কোন সীমান্ত দিয়ে তিনি গেলেন? তার তো ভিসা-পাসপোর্ট কিছুই নবায়ন করা হয়নি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন তাকে যেতে দিল কিসের ভিত্তিতে? প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথাগুলো বললেন। ৪. কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ জানালেন, ভারতীয় দূতাবাসের দুই কর্মকর্তার কাছে অনুপ চেটিয়া এবং তার দুই সহযোগী লক্ষ্মীপ্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ‘তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সীমান্ত পার হয়েছে’- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন বক্তব্য কেন দিলেন? দুপুর পর্যন্ত বিষয়টি স্বীকার না করারই বা কারণ কী? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আর কারাগার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সম্পূর্ণ দুই রকম। মনে হয় বিষয়টির কিছুই জানতেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্তত তার বক্তব্যে তাই প্রমাণ হয়। ৫. ভারতীয়সহ অন্য যে কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় না দেয়ার নীতি তো আমরা সমর্থন করি। অনুপ চেটিয়া নিজেও ভারতে যেতে চান, তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে- এটাই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশ তাকে আরও আগেই ফেরত দিতে পারত, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না। এখন ফেরত দিল, খুবই ভালো কথা। কিন্তু ফেরত দেয়ার জন্যে তো সুনির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। লুকোচুরির তো কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমাদের বিজিবি কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করতে পারত। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা থাকতে পারতেন সঙ্গে। হস্তান্তর করার আগে বা হস্তান্তর করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জানানো যেত। তাহলে তো দিনভর বিভ্রান্তির তৈরি হতো না। দেশের গণমাধ্যমকে সংবাদ জানার জন্যে ভারতীয় গণমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। ৬. একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলছেন, অথচ তা বিশ্বাস করছেন না কেউ, এটা তো কারও জন্যেই শোভনীয় নয়। এমন ঘটনা যে শুধু এখন ঘটছে তাও না। এর আগে উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোয়া, শশধর চৌধুরী, চিত্রবন হাজারিকাসহ অনেককে যখন হস্তান্তর করা হয়েছে, তখনও সংবাদ জানতে হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে। ৭. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বন্দী নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বলছেন, আদালতের মামলা শেষে ভারত যখন তাকে ফেরত দেবে, তখন তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। নূর হোসেনকে ফেরত আনতে হলে ভারতীয় আদালতের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিতে বাংলাদেশের আদালত বা কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল না? ঠিক আছে, তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি তো বাংলাদেশের বন্দী ছিলেন, জেলে ছিলেন। যে পদ্ধতিতে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সেটা নিশ্চয়ই প্রক্রিয়া নয়। একটি রাষ্ট্র কেন এসব ক্ষেত্রে গোপনে লুকোচুরি খেলবে? ৮. আমাদের নীতিনির্ধারকরা অসত্য কথা বলে এবং অসত্য-বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে, নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যে বা মাইনাসে নিয়ে গেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার কোনো প্রয়োজন থাকে না। এখন তারা সত্য কথা বললেও মানুষ সন্দেহ করেন, বিশ্বাস করেন না। গোলাম মোর্তোজা: সাংবাদিক; সম্পাদক, সাপ্তাহিক। [প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে এমটিনিউজ২৪.কম-এর সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে।] -প্রিয়.কম ১৩ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে